আজ শুক্রবার ║ ১৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║৩১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ২১শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

সর্বশেষ:

    বাংলাদেশ রেলওয়ে

    ৩ বছরেই অচল হুন্দাইয়ের ১২ ইঞ্জিন!

    Share on facebook
    Share on whatsapp
    Share on twitter

    বাংলাদেশ রেলওয়ের লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) সংকট কাটাতে কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম থেকে আমদানি করা ৩০ টি আধুনিক ইঞ্জিনের মধ্যে ১২ টি-ই অচল হয়ে হাসপাতালে (ডিজেল শপ) পড়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর অভাবে মেরামত করা যাচ্ছে না বলে বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে। ফলে ১১৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা এসব ইঞ্জিন এখন রেলের গলার কাঁটা হয়ে আটকে আছে। না পারছে গিলতে না পারছে ফেলতে।
    রেলওয়ে সূত্র জানায়, আমেরিকার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান প্রগ্রেস রেল’র তৈরি ও কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান হুন্দাই রোটেমে’র সরবরাহ করা ৩০০০ সিরিজের ৩০ টি ইঞ্জিন আমদানি করা হয়েছে ২০২১ সালে। এসব ইঞ্জিনের লাইফ টাইম ২০ বছর ধরা হলেও ২ বছরেই একাধিক ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে ১২টির ঠিকানা হয়েছে হাসপাতালে (ডিজেলশপ)। স্পেয়ার পার্টস দুস্প্রাপ্যতা ও কারিগড়ি অজ্ঞতার কারনে ৯ টি ইঞ্জিন সচল হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। বাকী ৩ টি কোনরকমে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা যেতে পারে। ইঞ্জিনের ৪টি মোটরের মধ্যে ২টি করে মোটর নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে ২টি মোটর নিয়ে ফুল স্পীড নিয়ে চলতে পারছেনা অনেকগুলো ইঞ্জিন। কোথাও লাইন একটু উচু হলে রাস্তায় থেমে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। ব্রীজ অতিক্রম করতে বেগ পেতে হচ্ছে। অথচ পুরাতন অনেক ইঞ্জিন আছে যার বয়স ৪০ বছর হলেও এখনো ভালোভাবেই চলছে।
    এব্যপারে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার (কেলোকা) প্রধান নির্বাহী সাইফুল ইসলাম বলেন, যন্ত্রাংশ সংকটে ৩০১৫ ও ৩০২৮ লোকোমোটিভ অচল আছে। স্পেয়ার পার্টসের জন্য চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। যন্ত্রাংশ না পেলে এগুলো চালু করা যাবেনা। আর ৩০০৯ ইঞ্জিনটি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সচল করা যাবে। তবে যন্ত্রাংশ সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ৮৫ শতাংশ যন্ত্রাংশ স্টকশুন্য মাত্র ১৫ শতাংশ অল্প পরিমানে আছে। প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে স্টকশুন্যের তালিকা। সরবরাহ প্রক্রিয়া আরো গতিশীল না হলে রেল চালানোই মুশকিল হয়ে পড়বে।
    অপর একটি সূত্র জানায়, হুন্দাইয়ের ইঞ্জিনগুলো নতুন প্রযুক্তি হওয়ায় এসব ইঞ্জিনের জন্য যথেষ্ঠ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন টেকনিশিয়ান রেলের নেই। ফলে মেরামত করতে পারছেনা।

    এদিকে ইঞ্জিন সংকটের কারনে সিডিউল ঠিক রাখতে পারছেনা কর্তৃপক্ষ। আবার রাস্তায় ইঞ্জিন বিকল হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা যাত্রা বিলম্বের ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
    ইঞ্জিন সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (সিএমই/ইস্ট) কাজী মোহাম্মদ সেলিম বলেন, রেলের প্রায় ৩০ হাজার আইটেমের পার্টস আছে। এরমধ্যে স্টকশুন্য রয়েছে অনেক আইটেম। যন্ত্রাংশ সংকটের কারনে কাজ করা যাচ্ছে না। দৈনিক ১১৬ টি ইঞ্জিনের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করা যাচ্ছে মাত্র ৭৫ থেকে ৮০টি। গড়ে প্রতিদিন ৪০ টির মতো ইঞ্জিন সংকট থাকে।
    এসব বিষয় নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীস্থ ডিজেলশপের কর্ম ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এতেসাম মো. শফিক বলেন, কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম থেকে ৩০ টি ইঞ্জিন আমদানিতে কর্তৃপক্ষের ভুল ছিল। যেহেতেু এই টেকনোলজিটা নতুন, তাই এগুলো পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করার মতো অভিজ্ঞতা আমাদের টেকনিশিয়ানদের নেই। তাদের উচিৎ ছিল আগে টেকনিশিয়ানদের পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা। কিন্তু তারা তা না করে অফিসারদের নিয়ে বিদেশ সফর করেছে, যা পরিচালনায় কোন কাজে আসেনি। একেকটা ইঞ্জিনের জন্য ৬টি ডিপার্টমেন্ট কাজ করে আর এই ৬টি ডিপার্টমেন্টে থেকে কমপক্ষে একজন করে টেকনিশিয়ান বা প্রকৌশলীকে ট্রেনিং করানো উচিত ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি। ফলে পরিচালনা বা মেরামতের কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোকের সংকট। ছোটখাট ত্রুটিও মেরামত করা যাচ্ছেনা। তবে এগুলো মেরামতের জন্য ৩ বছরের ওয়ারেন্টি মেয়াদ পর্যন্ত সার্ভিস দিয়েছে। কিছু বিষয় সমাধান করেনি। আমরা তাদের জানাতে লেট হয়েছে বলে জানান সরবরাহকারী। শীপমেন্ট জটিলতার অযুহাতে তাঁরা প্রস্তবনা পাঠাতে বিলম্ব করেছে। সম্ভবত প্র্রস্তাব পৌছাতে পৌছাতে ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। আর এসব ইঞ্জিনের পার্টসগুলো তাদের কাছে ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যায়না। তাই আমাদের আরো আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়ার দরখার ছিল। আমরা যথাসময়ে চাহিদাপত্র দিলেও সরবরাহ পাইনি। আমরা এখন নতুন করে তাদের সাথে সার্ভিস কন্ট্রাক্ট করার চেষ্টা করছি। যেখানে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান প্রগ্রেস রেল ও সরবরাহকারী হুন্দাই রোটেমের প্রতিনিধি থাকবে। আমাদের লোকজন তাদের সাথে থেকে অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি কাজ করবে।
    এব্যপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএস) মো. বেলাল সরকার বলেন, ”যন্ত্রাংশের প্রচুর চাহিদাপত্র জমা পড়েছে। কেনাকাটার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নেই। গত অর্থবছরে বরাদ্দ কম পেয়েছি, এবারও ৪০০ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে ২১০ কোটি বরাদ্দ দিয়েছে, এটা যথেষ্ঠ নয়। বকেয়া আছে ১৬০ কোটি টাকা। তবু বিদেশি মালের জন্য এলসি করা হয়েছে, অক্টোবরের মধ্যে কিছু যন্ত্রাংশ এসে পৌছাবে বলে আশা করছি।” লোকাল যন্ত্রাংশ কেনায় ইজিপি টেন্ডারকে বড় অন্তরায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ”শতভাগ ইজিপি করার নির্দেশ দিয়েছে হাই অথরিটি। এই প্রক্রিয়ায় অনেকেই না বুঝে অংশ নেয় এবং রেট কম দেয় কিন্তু সরবরাহের সময় নিম্নমানের যন্ত্রাংশ দেয়ার চেষ্টা করে। ফলে আবার রিটেন্ডার করতে হয় এভাবে টাইমকিল করার কারনে কেনাকাটায় বিলম্ব হয়ে থাকে। অতি জরুরী মালামালের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি শিথিল করা দরকার বলেও মনে করছেন তিনি।”

    সুত্র জানায় রেলের লোকেমোটিভ সংকট কাটাতে কোরিয়া থেকে ৩০ টি মিটারগ্যাজ ইঞ্জিন আমদানি করা হয়। যার সিরিজ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০১ থেকে ৩০৩০ পর্যন্ত। ২০১৮ সালের ১৭ মে এসব ইঞ্জিনগুলো কিনতে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেমের সঙ্গে চুক্তি করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে ২৯৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রথম ধাপে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আনে ১০টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন)। পরে আরেকটি প্রকল্পে ৮৪১ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আরো ২০টি লোকোমোটিভ কেনা হয়।
    অপর একটি সূত্র জানায়, কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম থেকে আবারো ৩০ ইঞ্জিন আমদানির চিন্তা করছে সরকার। এরজন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করেছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিনকে। সদস্যসচিব এডিজি (আরএস)। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন: রেলের মহাপরিচালক (ডিজি), ডিএমটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের একজন অধ্যাপক।
    এব্যপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আফজাল হোসেনের মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।##

    Share on facebook
    Share on twitter
    Share on whatsapp
    Share on linkedin
    Share on telegram
    Share on skype
    Share on pinterest
    Share on email
    Share on print