
সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোরশেদ আলম চৌধুরী। মাত্র তিন মাস আগে যিনি দায়িত্ব ভার গ্রহন করলেন। আর পেশাগত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে অল্প দিনেই সুশীল সমাজের নজর কাড়লেন তিনি। তাও যেই সেই কাজে নয়। মানবিক ও সামাজিক অনেক কাজ করে তিনি দ্রুত প্রশংসা কুড়িয়েছেন। অফিসিয়াল কাজের সময় বা অবসর সময়ে কোথাও কাউকে অমানবিকভাবে জীবন যাপন করতে দেখলে তিনি সেখানে থমকে দাঁড়ান, ভাবতে থাকেন কিভাবে তাকে সহযোগিতা করা যায়। এছাড়াও উপজেলার স্থানীয় সমাজকর্মীদের মাধ্যমে তেমন কোন বিষয় জানতে পারলে তিনি সহযোগিতার হাত বাড়ান।
এরপর তিনি মানবিক সহায়তা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে সেগুলো পোস্ট করেন বিত্তবান ও প্রবাসীদের সহযোগিতা চেয়ে।তারই পরিপ্রেক্ষিতে সন্দ্বীপের অনেক প্রবাসী বিত্তবানরা এগিয়ে আসেন অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে।এমনি ভাবে পরপর অনেক গুলো হৃদয় ছোঁয়া মহতী উদ্যোগ যাকে অল্প দিনেই মানবিক মানুষের মর্যদা এনে দিলো সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো-
সন্দ্বীপের মুছাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. হাশেম। স্ত্রী ও দু্ই মেয়ে নিয়ে তার সংসার। ভাড়ায় অটোরিকশা চালিয়ে অভাব অনটনে সংসার চালিয়ে আসছেন হাশেম। সম্বল বলতে মাথা গোঁজার জন্য বসত ভিটা ছাড়া কিছুই ছিলোনা। এদিকে পুত্র-সন্তানহীন হাশেমের বড় মেয়ে প্রতিবন্ধী।তার বড় মেয়ে প্রতিবন্ধী হওয়ায় ছোট মেয়ের বিয়ের বন্দোবস্ত করলেও আর্থিক সংকটে পেরে উঠতে পারছিলেন না।অসহায় হাশেমকে নিয়ে ফেইসবুক পোস্টের পর সন্দ্বীপের আমানউল্লাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার ক্যাপ্টেন আজাদুর রহমান একটি অটোরিকশা উপহার দেন হাশেমকে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতার উপস্থিতিতে হাশেমের হাতে উক্ত গাড়ি ও চাবি তুলে দেন নির্বাহী কর্মকর্তা খোরশেদ আলম।সঙ্গে প্রবাসী ও বিত্তবানদের প্রেরিত অর্থের ৮০ হাজার টাকা হাশেমের মেয়ের নামে কৃষি ব্যাংক সন্দ্বীপ শাখায় ডিপোজিট করে রাখা হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
গত ২৪ জানুয়ারী তামিম(৩০), পিতা: মো: হাবিবুল্লাহ সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের নিউরো সার্জারি বিভাগের ২৮নং ওয়ার্ডের ০৮নং বেড/কেবিনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন। ২ ফেব্রুয়ারী তারিখে তিনি গিয়েছিলেন এতিম ও অসহায় তামিমকে একনজর দেখার জন্য। দায়িত্বরত ডাক্তার ও নার্সদের কাছে জানতে পারলেন তার স্পাইনাল কার্ড(মেরুদণ্ড) মেজর ফ্রেকচার(বাঁকা) হয়েছে। অতিদ্রুত সার্জারীর মাধ্যে রড বসানো দরকার অন্যথায় চিরদিনের জন্য প্যারালাইজড হয়ে যতে পারে। অপারেশনের জন্য আটটি রড স্ক্রু লাগবে এবং অপারেশনের পূর্বে ও পরে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও চেকআপের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তামিমের স্ত্রী ফারহানাকে ঔষধপত্র ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ক্রয়ের জন্য ১০(দশ)হাজার টাকা প্রদান করেন তিনি।
গত ৪ ফেব্রুয়ারী সন্দ্বীপ এতিমখানা এন্ড ওয়ার্কস হাউজ এ গিয়েছিলেন তিনি এতিম শিশুদের সাথে সময় কাটানোর জন্য। সে সময় তাদের থাকা খাওয়া, পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন তাদের সবারই খেলার প্রতি বেশ আগ্রহ। স্পোর্টস সামগ্রী না থাকার কারণে খেলাধুলা করতে পারছেনা তারা। তাই সেখানকার ১৪জন এতিম শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য স্পোর্টস সামগ্রী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন । সে প্রেক্ষিত প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক মো: কামরুল হাসান এর নিকট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ০১টি কেরাম বোর্ড, একসেট ক্রিকেট সরঞ্জাম(ব্যাট, স্ট্যাম্প, বল), ফুটবল, ভলিবলসহ অন্যান্য খেলার উপকরণ প্রদান করেন।তার আহব্বানে আরেক মানবিক যুবক সাংবাদিক ওমর ফয়সাল উক্ত এতিম খানার জন্য ৫০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন।
তিনি যোগদানের পর প্রতিটি ইউনিয়ন ও বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন উড়ির চর সহ ১৫ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় কয়েক হাজার কম্বল বিতরন করেন মানুষের সহযোগিতা নিয়ে।
এভাবে অনেক প্রতিবন্ধীকে হুইল চেয়ার, কন্যাদায়গ্রস্থ পিতাকে আর্থিক সহযোগিতা অসুস্থ ব্যাক্তিদের চিকিৎসা সহায়তা করেন অনেক। সব মিলিয়ে নিজের দায়িত্বের বাইরে অবসর সময়ে এমন চমৎকার কাজ করে আত্মতৃপ্তি পান তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, সন্দ্বীপের বিত্তবানরা যেভাবে এগিয়ে আসে তাতে আমি মুগ্ধ ও পুলকিত হই এবং অবাকও হই সন্দ্বীপের মানুষের সেবার মনোভাবে এতো সাড়া পেয়ে। সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এরপরও শর্তহীন দান করলেও তাদের প্রদেয় টাকার স্বচ্ছতার জন্য আমি খুবই সতর্ক থাকি আমার প্রতি বিশ্বাসের মর্যদা রাখতে। আমার কাজে নুন্যতম ফাঁকি/কারচুপি নাই। আমি শতভাগ স্বচ্ছতা, ন্যায় ও জবাবদিহিতার সাথে কাজ করছি। কারো যদি সন্দেহ হয়, তাহলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আমি কথা ও কাজে শতভাগ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, ওনার মানবিক কাজে এমন দ্রুত সাড়া প্রদানের দৃষ্টান্ত আমাদের দৃষ্টি কেড়েছে। ওনার এমন কাজের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন থাকলে মানুষ অনেক উপকৃত হবে। তবে এসব কাজেও অনেকের ঈর্ষা ও এলার্জি থাকে। তাদের বিষয়ে ওনার সতর্ক দুষ্টি রেখে সমালোচনাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা ওনার এই মানবিক কাজে ওনার পাশে থাকবো মানষিক সাপোর্ট নিয়ে।