আজ বুধবার ║ ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ বুধবার ║ ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ║ ১২ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ:

    স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শনিবার: থাকবেন প্রধানমন্ত্রী

    নিরাপত্তায় থাকছে নৌবাহিনী, পুলিশ, ৪ স্ক্যানার, ১১০ সিসি ক্যামেরা

    Share on facebook
    Share on whatsapp
    Share on twitter

    স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সুরক্ষায় কাজ করবে নৌবাহিনী ও পুলিশ। এই পাতাল সুড়ঙ্গ সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে ট্র্যাফিক পুলিশ। দুই পাশে দুটি ফাঁড়ি ও দুটি ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। টানেলের প্রবেশমুখে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হচ্ছে চারটি অত্যাধুনিক স্ক্যানার। উদ্বোধনের আগেই দুই প্রান্তে দুটি স্ক্যানার বসানোর কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া, বাকি দুটি উদ্বোধনের পর দ্রুত স্থাপনের কাজ শুরু হবে।

    প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, স্ক্যানার দিয়ে টানেলের ভেতর দিয়ে যাওয়া পণ্যবাহী ভারী গাড়িগুলোতে চালক ও পণ্য রাখার অংশ আলাদা রঙের রশ্মি দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। এ ছাড়া, টানেলের ভেতর দিয়ে চলাচলকারী বাস, কার, মাইক্রোবাস ও অন্যান্য যানবাহনের ক্ষেত্রে স্ক্যানারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে ইউভিএসএস (আন্ডারভেহিকেল স্ক্যানিং সিস্টেম)। ইউভিএসএস দিয়ে যানবাহনের নিচের অংশে বিস্ফোরক জাতীয় সরঞ্জাম আছে কি না, তা যাচাই করা হবে।

    টানেলের সিকিউরিটি দুই ধরনের। যেমন- কোথাও গাড়ি নষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে কন্ট্রোল রুম থেকে বিষয়টি অবহিত করা হবে। দ্রুত একটি টিম এসে গাড়িটি সরানোর ব্যবস্থা করবে। এগুলো অপারেশন ও মেইনটেন্যান্সের কাজ। এ ছাড়া, টানেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা হলে সেটি দ্রুত অপারেশনাল টিম গিয়ে সমাধান করবে। টানেলের কোথাও অগ্নিকাণ্ড হলে ভেন্টিলেশন সিস্টেম, ড্রেনেজ সিস্টেম, পাওয়ার সিস্টেম এগুলো নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান দেখভাল করবে। আর পুলিশের কাজ হবে বাইরে থেকে ভেতরে গিয়ে যাতে কেউ নাশকতা করতে না পারে— সেটি দেখা

    পুরো টানেলে স্থাপন করা হয়েছে ১১০টি সিসিটিভি ক্যামেরা। অত্যাধুনিক ও অটোমেটিক এসব ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিং করা হবে সবকিছু। টানেলের আনোয়ারা অংশে স্থাপন করা হয়েছে মনিটরিং স্টেশন। যেখান থেকে সবকিছুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া, টানেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিসিসি) সার্বক্ষণিক বিশেষ টিম তৈরি থাকবে। তারা যেকোনো প্রয়োজনে দ্রুত মুভ করবে।

    টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, টানেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি আগামী পাঁচ বছর টানেল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে। টানেলের কাজ চলাকালীন নৌবাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছে। উদ্বোধনের পর নৌবাহিনী তাদের নিজেদের মতো করে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি দুই পাশে দুটি ফাঁড়ি হচ্ছে। সেখানে পুলিশ অপরাধ দমনের কাজ করবে। এ ছাড়া, ট্র্যাফিক পুলিশ যানবাহন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে।

    ‘টানেলের সিকিউরিটি দুই ধরনের। যেমন- কোথাও গাড়ি নষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে কন্ট্রোল রুম থেকে বিষয়টি অবহিত করা হবে। দ্রুত একটি টিম এসে গাড়িটি সরানোর ব্যবস্থা করবে। এগুলো অপারেশন ও মেইনটেন্যান্সের কাজ। এ ছাড়া, টানেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা হলে সেটি দ্রুত অপারেশনাল টিম গিয়ে সমাধান করবে। টানেলের কোথাও অগ্নিকাণ্ড হলে ভেন্টিলেশন সিস্টেম, ড্রেনেজ সিস্টেম, পাওয়ার সিস্টেম— এগুলো নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান দেখভাল করবে। আর পুলিশের কাজ হবে, বাইরে থেকে ভেতরে গিয়ে যাতে কেউ নাশকতা করতে না পারে— সেটি দেখা।

    টানেলের দুই প্রান্তে দুটি থানার প্রস্তাবও দেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। যদিও এখন পর্যন্ত থানার অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় আপাতত দুই প্রান্তে দুটি ফাঁড়ি দিয়ে কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নগর পুলিশের বন্দর জোন। যদিও ফাঁড়ি নির্মাণের কাজ এখনও শুরু হয়নি। আপাতত পতেঙ্গা থানা ও কর্ণফুলী থানা থেকে পুলিশ পাঠিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। ফাঁড়ির কাজ শেষ হলে সেখানে ফোর্স পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

    প্রাথমিকভাবে প্রতিটি প্রান্তে একজন করে সার্জেন্ট এবং তিনজন করে কনস্টেবল থাকবে। ২৪ ঘণ্টায় তিনবার ডিউটি বদল হবে। এ হিসাবে দৈনিক ছয়জন সার্জেন্ট এবং ১৮ জন কনস্টেবল কাজ করবে। আপাতত এভাবে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনের পর যানবাহন বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। টানেলের দুই প্রান্তে দুটি ফাঁড়ি হচ্ছে। ফাঁড়ি তৈরি হয়ে গেলে জনবল সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হবে জানিয়েছেন উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

    এ বিষয়ে বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার শাকিলা সুলতানা বলেন, ‘থানার অনুমোদন হয়নি। আপাতত নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় কে- ৯ নামের একটি বিশেষায়িত ডগ স্কোয়াড চাওয়া হয়েছে। কেপিআই নিরাপত্তার জন্য একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই-সশস্ত্র), নায়েক দুজন এবং ১০ জন কনস্টেবল চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, প্রতিটি ফাঁড়ির জন্য একজন এসআই (নিরস্ত্র), এএসআই (নিরস্ত্র) চারজন ও কনস্টেবল ২৫ জনসহ মোট ৩০ জনের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় মোটরসাইকেল, টহল গাড়ি ও পেট্রোল কারের চাহিদা দেওয়া হয়েছে।’

    এখন পর্যন্ত টানেল ব্যবস্থাপনায় ‘অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ’ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরা হচ্ছে। ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ড সামাল দিতে টানেলের নিজস্ব টিম এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনা রয়েছে। তারপরও বড় অগ্নিকাণ্ড হলে তা নির্বাপণ এবং দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা চালাতে টানেলের দুই প্রান্তে দুটি প্রথম শ্রেণির ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। দ্রুত স্টেশন নির্মাণকাজ চললেও এটি শেষ হতে আরও কয়েক মাস লাগতে পারে।

    এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, ‘আগামী মার্চের দিকে কাজ শেষ হতে পারে। তবে, উদ্বোধনের পর আপাতত টানেলের একপ্রান্তে সিইপিজেড এবং অন্যপ্রান্তে কর্ণফুলী ফায়ার স্টেশনকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফায়ার স্টেশন দুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে প্রথম শ্রেণি বিবেচনায় সেখানে ৩৫ জন করে জনবল এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হবে।’

    নির্মাণের আগে করা সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সেই হিসাবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী পরিবহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।

    টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে চার হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে। চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

    Share on facebook
    Share on twitter
    Share on whatsapp
    Share on linkedin
    Share on telegram
    Share on skype
    Share on pinterest
    Share on email
    Share on print

    সর্বাধিক পঠিত

    আমাদের ফেসবুক

    আমাদের ইউটিউব

    সর্বশেষ খবর