আজ বৃহস্পতিবার ║ ২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ বৃহস্পতিবার ║ ২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ২৪শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ:

    হতাশা কিছুই দেয় না, শুধু আশাগুলো বিনষ্ট করে দেয়

    Share on facebook
    Share on whatsapp
    Share on twitter
    CREATOR: gd-jpeg v1.0 (using IJG JPEG v62), default quality?

    দুনিয়াতে কিছু মানুষ অসম্ভব যোগ্যতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন, তাদেরকে বলা হয় গিফট চাইল্ড,তারা মহান আল্লাহর প্রদত্ত মস্তিষ্কের ক্ষমতার অধিকারী। তারা দুনিয়াতে সুপার জিনিয়াস হন। তাদের সংখ্যা কোটিতে একজন। যেমন রবীন্দ্রনাথ নয় বছর বয়সে অসাধারণ কবিতা লেখে সবাইকে অবাক করে দেন। শঙ্করাচার্য নয় বছর বয়সে পুরো বেদ মুখস্ত করেন। বেটোফেন পাঁচ বছর বয়সে সিম্পনি রচনা করে সবাইকে বিস্মিত করেন।
    খ্যাতি অর্জন করতে হলে অভিজাত বা ধনীর সন্তান হতে হয় না। সুপার জিনিয়াস বা কোন বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রও হতে হয় না। দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষের মস্তিস্ক দেড় লিটার। সেরা বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের মস্তিস্ক ছিল দেড় লিটার। লর্ড বাইরনের মস্তিষ্ক ছিল আড়াই লিটার। সাদামাটা মস্তিষ্ক দিয়ে আইনস্টাইন হওয়া যায়, আবার বাইরনের মত মস্তিষ্ক নিয়ে বহু মানুষ হতাশায় ব্যর্থ হতে দেখি। মেধা, ক্ষমতা, সৌন্দর্য, অভিজাত্য ও অর্থবিত্তের অধিকারি হয়ে অনেক মানুষ ব্যর্থ হন। এ সব কিছুর অধিকারী না হয়ে ইচ্ছাশক্তি, স্বপ্ন ও প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের কারণে জগৎ বিখ্যাত হতে দেখেছি। মানুষ চেষ্টা করলে আইনস্টাইন হতে পারেন, আইনস্টাইন নিজেই বলেছেন, ‘প্রতিভা এক ভাগ আর পরিশ্রম তিন ভাগ। প্রতিভা যা থাকুন আত্মবিশ্বাস নিয়ে পরিশ্রম করলে যে কেউ সফল হতে পারে। বটবৃক্ষ কারো পরিচর্যার ওপর নির্ভর করে না, নিজ শক্তিতে বিশাল হয়ে উঠে এবং দীর্ঘজীবী হয়। সফলতা কঠোর শারীরিক বা মানসিক পরিশ্রমেই আসে। এটি আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ.)’র শিক্ষা। হযরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) কী জান্নাত হতে কোন চাকর দাসী নিয়ে এসেছিলেন? সব কাজই তাঁরা নিজেই করেছেন। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (দ.)’র ঘরের পাশে আল্লাহর ঘর খানায়ে কাবা। নবুয়ত প্রকাশ, কোরআন নাজিল এবং হযরত জিব্রাইল (আ.)’র আগমন এই খানায়ে কাবায় হয়নি। খানায়ে কাবা হতে ৬ মাইল দূরে জবলে নূরের আড়াই হাজার ফুট উপরে হেবা গুহায় রাতের পর রাত, দিনের পর দিন, বছরের পর বছর কঠোর শারীরিক মানসিক পরিশ্রম করে কোরআন প্রাপ্ত হন এবং নবুয়ত প্রচারের হুকুম আসে। হেরা গুহায় এসব মহৎ প্রাপ্তির সাধনা প্রিয় নবী (দ.) এক বছর নয়, পাঁচ বছর নয়, দশ বছর নয়, বিরতি দিয়ে পনের বছর করেছিলেন। দুনিয়াবাসীকে তিনি জানিয়ে গেলেন, মহৎ কিছু অর্জন করতে চাইলে কঠোর শারীরিক মানসিক সাধনার বিকল্প নেই। গৌতম বুদ্ধের ছয় বছরের কঠোর সাধনায় বুদ্ধত্ব লাভ করেন। মানুষ জন্মে স্বাধীন কিন্তু কর্ম মানুষের অধীন। উপনিষদে আছে ‘শ্রম বিনা শ্রী হয় না’। শ্রমের মাধ্যমে শত শত মানুষ দুনিয়াতে খ্যাতি অর্জন করেন অথচ তারা ছিলেন গবীর অসহায়ের সন্তান। লিও টলেস্টয় বলেছেন, ‘শ্রম ব্যতীত যারা অন্ন গ্রহণ করে, তারা সকলেই চোর না হয় পাপী। তাই ইসলাম ধর্ম বিনাশ্রমে অর্জিত সুদকে হারাম ঘোষণা করেছে। ১৯৬৫ সালে সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া থেকে স্বাধীন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী মি. লি কোয়ানে ইউ অঝোরে কেঁদেছিলেন। তিনদিন জনসম্মুখে তিনি বের হননি। কি করবেন ভূমিহীন, খাদ্যহীন, খনিজ সম্পদহীন এই ভূমণ্ড নিয়ে। তার এই কান্না অসহায়ত্বের নয়, ভাবনার, তাই তিনি পথ খুঁজে নিয়েছিলেন। পুরো সিঙ্গাপুরবাসীকে জাগিয়ে তুলেন। তাদের কঠোর পরিশ্রমে জেলেদের গ্রাম সিঙ্গাপুর হয়ে উঠেন দুনিয়ার সেরা একটি সিটি কান্ট্রি।
    সফলতা কারো দরজায় কড়া নাড়ে, আর কেউ ডেকে আনতে হয়। আজই আপনি সফল হবেন এমন নয়। দ্রুত সফলতা সবার আসে না। কিন্তু হতাশ হওয়া যাবে না। হতাশা কিছুই দেয় না, শুধু আশাগুলো বিনষ্ট করে দেন। কবি শেলী, কিটস,রবীন্দ্রনাথ, স্বামী বিবেকানন্দ, সুকান্তের সফলতা ত্রিশ বছরে আসে, আবার ইন্দ্রিরা গান্ধী, রাজশেখর বসু, বিভূতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফলতা আসে ৪০ বছর পর, বৃদ্ধ বয়সে সাফল্য ছিনিয়ে এনেছেন নীরদ সি চৌধুরী, জার্মানির চ্যান্সেলর আদ্যেনুর,ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী। (সূত্র ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রন্থ, নিজকে বদলান নিজেই)।
    সকলেই প্রথম সফল নাও হতে পারেন কিন্তু হতাশ হতে নেই। রবার্ট ব্রুস একে একে একুশ বার প্রচেষ্টার পর হারানো রাজ্য ফিরে পেয়েছিলেন।পরগনার রাজা ওমর শেখ মীর্জার সন্তান জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর ভাইদের যুদ্ধে তিন তিন বার পরাজিত হন। তিনি পরাজিত হয়ে হতাশ হননি, পরাজয় হতে শিক্ষা গ্রহণ করে বৃহৎ বিজয়ের সূচনা করেন। ভারতবর্ষে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বিশাল মোগল সাম্রাজ্য। তাঁর ভাইদের নাম কেউ জানে না। বাবর ইতিহাসে অজয় অমর হয়ে থাকবে। যে কোনদিন পরাজিত হননি, তার দ্বারা বিজয় সম্ভব নয়, তার মানে বিজয়ী হতে হলে অবশ্য পরাজিত হতে হয়। আইনস্টাইন বলেছিলেন, আমার ৯৯ ভাগ গবেষণা ভুল। একজন জানতে চাইলেন, আপনি কি ৯৯ ভাগ ব্যর্থ? তিনি বলেন, ব্যর্থ হবো কেন! আমার ভুলগুলো আমাকে শিখিয়েছে, কাজটা ওভাবে হয় না, এই ভাবেই হয়। ৯৯ ভাগ ভুলগুলো না করলে আমি একশততম সঠিক কাজটি খুঁজে পেতাম না। আইনস্টাইন ছিলেন আধুনিক বিজ্ঞানীদের মধ্যে সর্বসেরা বিজ্ঞানী। আর বৃটিশের
    সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ছিলেন একমাত্র সরকার প্রধান যিনি সাহিত্যে নোবেল বিজয় করেন। এই দুইজন খ্যাতিমান মানুষকে এক সময় স্কুল শিক্ষক বলেছিলেন, তোমাদের দিয়ে কিছুই হবে না। তারা বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, সত্যি একদিন বড় হয়েছিলেন। ধনকুবের বিল গেটস পরীক্ষার ফেল করেছিলেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলেছিল তাঁর জীবন শেষ। যারা এধরনের মন্তব্য করে ছিলেন তারা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে।ধন আর দানে বিল গেটস মহিমান্বিত হয়ে থাকবেন। হিটলার সৈনিকে যোগ দেওয়ার জন্য ভিয়েনা একাডেমীতে ভর্তি হতে গিয়ে অযোগ্যতার কারণে তারা গ্রহণ করেননি। তিনি পুরো দুনিয়াটা কাঁপিয়ে ছেড়ে ছিলেন। বড় হওয়ার ইচ্ছা থাকলে মানুষ বড় হতে পারে। কারো তুচ্ছ তাচ্ছিল্যতা, ঈর্ষা হিংসা মানুষের শক্তিকে বোধ করা যায় না। অনেক সময় মানুষ শত উপায়ে বড় হতে পারে না। কিন্তু একটি উৎসাহ,চেতনা, প্রেরণা, একটি আঘাত, অপমান, একটা মানুষকে বড় করে তুলে।এন্ড্রু কার্নেগী খুবই গরীব ঘরের সন্তান ছিলেন। ইচ্ছা হয়েছিলো পার্কে ঢুকার,ময়লা পোশাকের কারণে তাঁকে পার্কে ঢুকতে দেয়নি। সে বড় হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার জিদ করছিলেন। তাঁর জেদই তাকে বড় করে, বড় হয়ে একদিন সেই পার্ক কিনে সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেন, ‘সবার জন্য উন্মুক্ত’। ড. আম্বেদকর নিম্নবর্ণের ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন বলে তাঁকে স্কুলের ভিতরে কেউ বসতে দিত না। বারান্দায় বসে ক্লাস করতেন। কোন গাড়ি তাঁকে নিতো না, মাইলের পর মাইল এক স্বপ্নের নেশায় হেঁটে স্কুলে যেতেন। তিনিই একদিন হয়ে যান বিশাল ভারতে সংবিধান প্রণেতা ড. আম্বেদকর।
    আব্রাহাম লিঙ্কন স্কুল পরীক্ষায়, সিনেট নির্বাচনে এবং নিজের ব্যবসায় ৩২ বার ফেল করে কী শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে ছিলেন? না,তিনিই হয়েছিলেন আমেরিকার সেরা প্রেসিডেন্ট এবং গণতন্ত্রের একজন প্রধান প্রবক্তা। বিখ্যাত হতে হলে চেহারা সুন্দর হতে হয় না। স্মার্ট হতে হয় না। লিঙ্কনের মুখ ও হাত বড় ছিল। অসুন্দর দেখাতো। এক লোক একদিন ব্যঙ্গ করে বললো, আপনার চেহারা তো একদম সাদামাটা। লিঙ্কন উত্তরে বললেন, ইশ্বর সাদামাটা মানুষকে বেশী পছন্দ করেন তাই সাদামাটা মানুষ অধিক সৃষ্টি করেছেন। দুনিয়াতে সুন্দর মানুষের সংখ্যা কম। ফার্সী ভাষার সেরা কবি হযরত শেখ শাদী (রা.)’র চেহারা অসুন্দর ছিলো। তাঁর হাতে
    ফার্সী সাহিত্য অসাধারণ সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠে। নেপোলিয়ান খাটো ছিল, সক্রেটিসের মাথায় চুল ছিল না, চোখ ছিল ছোট, চেহারা কুৎসিত। এরিস্টটল তোতলা ছিলেন, লতা মঙ্গেস্কারের চেহারা সুশ্রী নয়। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসে সমস্ত অসুন্দরকে পদাঘাত করে তারা নিজের জীবনকে সুন্দর করে ছাড়ছেন। কোন কিছুই জীবনের উন্নতির পথে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারে না। বাধা শুধু নি নিজের ভিতরের ‘ভয়’ যা আমাদের নিজের সৃষ্টি। ভয়কে জয় করা গেলে নিজেই জয়ী হবে। মাথা উঁচু করে বলতে পারবে আমি বিজয়ী।
    লেখক: কলাম লেখক

    Share on facebook
    Share on twitter
    Share on whatsapp
    Share on linkedin
    Share on telegram
    Share on skype
    Share on pinterest
    Share on email
    Share on print

    সর্বাধিক পঠিত

    আমাদের ফেসবুক

    আমাদের ইউটিউব