চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার ১নং (খ) চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে ভবন নির্মাণের অনুমতি প্রদান করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ।
গত ২৫ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমীন প্রধান স্বাক্ষরিত এক চিঠি বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১নং (খ) চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব অর্থায়ন ও এলাকাবাসীর অনুদানের মাধ্যমে ৪ (চার) তলা ভবন নির্মাণের জন্য নিম্ন তফসীলভুক্ত ভূমিতে প্রশাসনিক অনুমোদন করা হয়েছে। যার ভূমির তফসিল চরপাথরঘাটা মৌজার
খতিয়ান নম্বর ১৩১৬, জেএল নং-১৯, বিএস দাগ ৭৯, জমির পরিমাণ ০.১০ একর।
একই চিঠির অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রীর সচিব, সচিবের একান্ত সচিব, অতিরিক্ত সচিব এর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, যুগ্ম সচিব (ইউপি) এর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বরাবর।
২৫ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগ বিষয়টি অনুমোদন দিলেও সাধারণ মানুষ জানতে পারেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চিঠির কপি ভাইরাল হওয়ার পরে। এতে চরপাথরঘাটা এলাকার সাধারণ মানুষকে নানা মন্তব্য করতে দেখা যায়।
কেননা, চিঠিতে পরিষদের নিজস্ব অর্থায়ন ও এলাকাবাসীর অনুদানের মাধ্যমে ৪ (চার) তলা ভবন ৫ গন্ডা জমির উপর তৈরি করা হবে বলে জানানো হয়েছে। যা এলাকাবাসীকে ভাবিয়ে তোলেছে।
এ বিষয়ে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের তোতারবাপের হাটের সোহেল, বুড়ির বাপের বাড়ির মোহাম্মদ ও খোয়াজনগরের আব্দুল শুক্কুর বলেন, এলাকাবাসীর উদ্যোগে মসজিদ, মাদরাসা, কালভার্ট, সেতু, সাঁকো ও রাস্তা নির্মাণ করে শুনেছি কিন্তু এলাকাবাসীর অর্থায়নে ইউনিয়ন পরিষদ নির্মাণ করার কথা আগে কখনো শুনিনি!
এলাকার লোকজন কানাঘুষা করছেন, , চরপাথরঘাটার বর্তমান চেয়ারম্যান যদি ৫০ লাখ টাকা নিজস্ব অর্থায়ন করে থাকেন। সে টাকায় তো চরপাথরঘাটার যেকোন এলাকায় পরিষদ ভবন নির্মাণ করার মতো জমি কেনা যায়। আর সে জমিতে সরকারি বরাদ্দে বড় পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা যায়। কেন ছোট জায়গায় ৪ তলা ভবন নির্মাণ করবেন? এমনকি বিগত কয়েক বছরে যে পরিমাণ বিভিন্ন ট্রেড লাইসেন্স বাবদে ব্যবসায়িদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়েছে, তাতে তো চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত অর্থায়ন বা মিলকারখানা ফ্যাক্টরী থেকে চাঁদা কালেকশন করতে হয় না। ট্রেড লাইসেন্সের টাকায় ভবন করা যায় বলে কড়া মন্তব্য করেছেন।
পাশাপাশি চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম, জাফর আলম ও জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জনগণের টাকায় পরিষদ করার দরকার নেই। যদি এলাকাবাসীর টাকায় পরিষদ নির্মাণ করতে হয় তাহলে তার আগে নয়াহাট সেতু নির্মাণ করা জরুরী। এ বিষয়ে কেউ উদ্যোগ নিলে আমরা খুশি হবো’।
ওদিকে, চরপাথরঘাটার মোহাম্মদ আজগর বলেন, যেভাবে সিডিএ তাণ্ডবে চরপাথরঘাটার ব্রিজঘাট তছনছ করা হয়েছে। এ সময় কখনো চরপাথরঘাটার চেয়ারম্যানকে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখিনি। এখন বিভিন্ন কলকারখানা ও ফ্যাক্টরীর মানুষ যে পরিষদ নির্মাণে পাশে দাঁড়াবে তা বিশ্বাস করা কঠিন।’
এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের বর্তমান পরিষদের ৯ ইউপি সদস্যদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, পরিষদ ভবন নির্মাণে পরিষদের নিজস্ব অর্থায়ন ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে টাকা তোলে চারতলা ভবন নির্মাণ করা হবে। আদৌও কী সরকারি বরাদ্দ ছাড়া জনগণের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে ৪ তলা ভবন নির্মাণ করা সম্ভব? এ প্রশ্নের জবাবে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা কে কি বলেছেন শোনা যাক।
চরপাথরঘাটা ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সাইফুদ্দিন মানিক বলেন, বিষয়টি হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদে কিছু টাকা আছে এবং চেয়ারম্যান সাহেবও ভবনের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা তার নিজস্ব তহবিল থেকে সহযোগিতা করবেন। চরপাথরঘাটায় বিভিন্ন মিল কারখানা রয়েছে। আমরা তাদের থেকে সহায়তা চাইব। আশা করি এ ব্যাপারে ওরাও সহযোগিতা করবে।
ইউপি সদস্য আবু তাহের বলেন, আমি এমনি শুনেছি পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে কাজ করবে। জনগণের থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমি জানি না।
ইউপি সদস্য সাইদুল হক বলেন, জানতে পেরেছি চেয়ারম্যান সাহেবের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ও ইউএনও সাহেবের সহযোগিতায় কাজ শুরু হবে। জনগণ থেকে টাকা তোলার বিষয়টি সঠিক নয়।
ইউপি সদস্য তাহের আহমেদ বলেন, কাজ করার জন্য চেয়ারম্যান সাহেব ৫০ লাখ টাকা দিবে বলে শুনেছি। আর কোথায় থেকে কি করবে আমি জানি না। জনগণের কাছ একটি টাকাও তোলা হবে না।
ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, নতুন ভবনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এ ব্যাপারে জানতে পারবে ফরিদ জুয়েল ও আবদুন নূর মেম্বার।
ইউপি সদস্য আবদুন নূর বলেন, বর্তমানে যে পরিষদ আছে সেটার জায়গা হচ্ছে ৫ গণ্টা। নতুন ভবনের জন্য জায়গা লাগবে ১২-১৩ গন্ডা। তার জন্য আমরা সরকারি ভাবে বরাদ্দ পাচ্ছি না। বৃষ্টি পড়লে জোয়ারের পানি ডুকে পরিষদে। জনগণকে সেবা দিতে গেলে নতুন ভবনের দরকার। তাই চেয়ারম্যান সাহেবের নিজস্ব অর্থায়ন ও চেয়ারম্যান সাহেবের মত কেউ স্ব-ইচ্ছায় ইউনিয়ন পরিষদের ভবন করার জন্য কেউ টাকা দিতে চাইলে আমরা নিব। কিন্তু চাঁদা তুলে কিংবা কারো থেকে চেয়ে কোনো টাকা নেওয়া হবে না।
সদস্য মো. ফরিদ জুয়েল বলেন, আসলে একটি পরিষদ করতে গেলে মিনিমাম ১২ গন্ডা জমির প্রয়োজন হয়। তাহলেই সরকারি বরাদ্দ পায়। আবার এদিকে আশেপাশে কোথাও জায়গাও কিনে পাওয়া যাচ্ছে না। জায়গা পাচ্ছি অনেক দূরে যেটা জনগণের জন্য অসুবিধা হবে। তখন জনগণ মেনে নিবে না। এখন আমরা সরকারি ভাবে বরাদ্দ পাচ্ছি না। যার কারণে চেয়ারম্যান মহোদয় ৫০ লক্ষ টাকা দিবেন। বাকি গুলো ট্যাক্সের টাকা আছে ও এলাকার বিত্তশালীদের থেকে অনুদান চাইব।
ইউপি সদস্য মো. আজাদ বলেন, চেয়ারম্যান মহোদয় এই কাজের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা দিবে পরিষদের নিজস্ব তহবিল থেকে দিবে। এলাকার মানুষের সার্বিক সহযোগিতাও অবশ্যই লাগবে।
ইউপি সদস্য মাহমুদুল হক সুমন বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব ৫০ লাখ টাকা দিচ্ছে। ১% ও ট্যাক্সের টাকা আছে। যদি শর্ট পড়ে এলাকার মান্যগণ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে নিব। এইভাবে কাজটা হবে। ওদিকে একাধিক বার কল করেও ফোন বন্ধ থাকায় চরপাথরঘাটার ইউপি চেয়ারম্যান হাজী ছাবের আহমদ এর মন্তব্য জানা যায় নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর কার্যালয়ে আবেদন করেন। আবেদনের আলোকে যাচাই ও তদন্ত করে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। যার প্রেক্ষাপটে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মন্ত্রণালয়ে পত্রের প্রেক্ষিতে এই অনুমোদন করা হয়।