আজ শুক্রবার ║ ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ শুক্রবার ║ ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║৩রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ║ ১৭ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ:

    তীব্র গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে করণীয়

    Share on facebook
    Share on whatsapp
    Share on twitter

    সারাদেশে তীব্র দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। দেশজুড়ে চলমান এই তাপপ্রবাহের কারণে এরই মধ্যে হিট এলার্ট জারি করা হয়েছে এবং দেশের সকল কলেজ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তীব্র গরমে মানুষের অতিরিক্ত ঘাম, অস্বস্তি ও ত্বক পোড়ানো অনুভূতিতে হাঁসফাঁস এবারের গ্রীষ্মে বাংলাদেশের জনজীবনে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে কয়েক গুণ।

    একদিকে তীব্র দাবদাহ, অন্যদিকে ডায়রিয়ার প্রকোপ ও কোন কোন স্থানে সুপেয় পানির তীব্র সংকটে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। এই পরিস্থিতিতে গুরুতর অসুস্থ, শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ পুরো স্বাস্থ্য বিভাগ নড়েচড়ে বসেছে। তীব্র গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলোর মধ্যে পানি শূন্যতা, ত্বকের নানা রকম রোগ, যেমন-ঘামাচি, ফুসকুড়ি, ছাত্রাক ইত্যাদি, অতিরিক্ত ঘাম, মাথা ঘুরানো, মাথা ব্যাথা, মানসিক চাপ-খিটখিটে মেজাজ, এলোমেলো কথা, অস্থিরতা, অবসাদগ্রস্থতা, ক্লান্তি ও দুর্বলতা, মাংসপেশীতে টান অনুভব করা, বুকে ধড়ফড়, পেটের পীড়া-ডায়ারিয়া, জ্বর-ঠাণ্ডা-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, পানিবাহিত রোগ, টাইফয়েড-জণ্ডিস, খিচুনি, হিট-স্ট্রোক, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত সমস্যাগুলো অন্যতম। কিছু নিয়ম মেনে চললে বা সাবধানতা অবলম্বন করে চললে তীব্র গরমেও ভালো ও নিরাপদ থাকা সম্ভব।

    অতিমাত্রার তাপ থেকে রক্ষায় করণীয়:

    এক. প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে না যাওয়ার চেষ্টা করা।

    দুই. যাঁরা হৃদরোগ, লিভার, কিডনী, ক্যান্সার ও স্ট্রোকের রোগী-খুব প্রয়োজন ছাড়া সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

    তিন. ঘরে থাকলে দরজা-জানালা খুলে দিন, যাতে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে, তবে জানালার পর্দা টেনে দিন যাতে রোদ সরাসরি ঘরে প্রবেশ না করে।

    চার. ঘরে থেকে বের হলে ছায়াপথ অনুসরণ করুন এবং মাথায় ক্যাপ, টুপি, গামছা, স্বার্ফ, কাপড় ব্যবহার করুন।

    পাঁচ. ভারী-কালো কাপড় পরিহার করে হালকা-পাতলা ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের সুতি কাপড় পরিধান করুন।

    ছয়. বাড়ির বাইরে বেরুবার সময় অবশ্যই ছাতা নিয়ে বের হবেন।

    সাত. বেরুবার সময় অবশ্যই এক বোতল খাবার পানি বা স্যালাইনযুক্ত খাবার পানি সঙ্গে নিন।

    আট. বাড়ির বাইরে সুযোগ মত পানির ঝাপটা মুখে দিন এবং ঘাড়ে ঠাণ্ডা পানি দিন।

    নয়. ত্বকে ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষায় প্রয়োজনে সানস্ক্রিণ ক্রিম ব্যবহার করুন।

    দশ. চোখে রোদ থেকে রক্ষায় প্রয়োজনে সানগ্লাস ব্যবহার করুন।

    এগারো. শরীরে পানি স্বল্পতা এড়াতে অতিরিক্ত নিরাপদ পানি, শরবত, লেবু পানি, ডাবের পানি, ফলের জুস, লাচ্ছি, খাবার স্যালাইন, লবন মিশ্রিত পানি পান করুন এবং টক দই, স্যুপ ও তরল খাবার গ্রহণ করুন।

    বারো. পানি ও রসালো গ্রীষ্মকালীন ফল শসা, তরমুজ, বাঙ্গি, ডালিম ইত্যাদি বেশি পরিমাণ খাবার চেষ্টা করুন।

    তেরো. প্রয়োজনে দিনে দু’বার গোসল করুন।

    চৌদ্দ. প্রয়োজনে হাতপাখা, সামর্থ্য অনুযায়ী ফ্যান ও এসি ব্যবহার করুন।

    পনেরো. আপনার ফ্রিজে পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা পানি ও বরফ মজুদ করুন।

    ষোলো. দিনমজুর বা শ্রমিকদের ক্ষেত্রে কাজের ফাঁকে কিছুক্ষণ পর পর ছায়াযুক্ত জায়গায় বিশ্রামের সুযোগ সৃষ্টি করা, মানবিক কারণে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিত।

    সতেরো. ডাই ইউরেটিক্স, বিটা ব্লাকার জাতীয় ওষুধ ও অ্যালকোহল খাবেন না।

    আঠারো. গরমে ব্যায়াম থেকে বিরত থাকুন।

    গরমে কি কি খাওয়া উচিত আর কি উচিত নয় তা জানা অত্যন্ত জরুরি:

    যেসব খাবার পরিহার করা বাঞ্ছনীয়:

    গরু-খাসি ও হাঁশের মাংস, ডিম, বেশি মসলাযুক্ত খাবার, তেলে ভাজা খাবার, পোলাও-বিরিয়ানি-কাচ্চি, তেহারী, স্টেক, ফাস্টফুড, ফুচকা, চা-কফি, বাইরের খাবার, বোরহানী, আইসক্রিম ও কোমলপানীয় ইত্যাদি।

    খাদ্য তালিকায় যা রাখবেন:

    শাক-সবজি, শসা, টমোটো, লাউ, ডাল, আম-ডাল, ভিটামিন ‘সি’ সম্বৃদ্ধ খাবার, পাতলা স্যুপ, রসযুক্ত ফল, নিরাপদ পানি, ডাবের পানি, লেবু পানি, স্যালাইন পানি, লবন সরবত, ফলের জুস, কাঁচা আমের শরবত, ডিটক্স ওয়াটার (পানি, লেবু, গাজর ও পুদিন রস সমন্বয়ে তৈরী) ও মাছ।

    হিট স্ট্রোক: কিভাবে বুঝবেন:

    যদি শরীরে তাপমাত্র ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তারচেয়ে বেশি ও সঙ্গে তীব্র মাথা ব্যাথা, মাথা ঘোরা, অতিমাত্রায় ঘাম, প্রচণ্ড তৃষ্ণা, পানি শূণ্যতা অনুভব করা, ডিহাইড্রেশন, দ্রুত হৃদস্পন্দন, বমি বমি ভাব হওয়া, প্রলাপ বকা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, মাংসপেশীতে টান পড়া, ঘাম না হওয়া, ক্লান্তি ও চরম দুর্বল হয়ে যাওয়া, গাঢ় রঙের প্রশ্রাব, চামড়া ফ্যাকাসে হওয়া, চামড়ার রঙ লালচে হওয়া, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসকষ্ট বা ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া, খিচুনী ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

    হিট স্ট্রোকে করণীয়:

    হিট স্ট্রোকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন। সময় মত চিকিৎসা না করলে হিট স্ট্রোকে মস্তিষ্ক, মাংসপেশী, হৃদপিণ্ড, কিডনীর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হতে পারে। চিকিৎসার দীর্ঘসূত্রিতায় মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। সাধারণত বয়স্কদের এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এটি বেশী ঘটে থাকে। এছাড়াও যাঁরা প্রচণ্ড রোদে কায়িক পরিশ্রম করে থাকেন-যেমন-কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, রিক্সাচালকরা হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

    হিট স্ট্রোক হলে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে। তবে তার আগে আক্রান্ত ব্যক্তির যতটুকু সম্ভব গায়ের কাপড় খুলে ফেলুন। দ্রুত শীতল স্থানে নিয়ে যান। রোগীর আশেপাশে ভিড় না থাকাই বাঞ্ছনীয়। হাত পাখায় বাতাস করুন। সম্ভব হলে ফ্যান বা এসি রুমের মধ্যে নিতে হবে। ঠাণ্ডা পানিতে সারা শরীর ভিজিয়ে মুছে ফেলুন। অজ্ঞান হলে দুই পা উপরের দিকে রাখুন।

    জ্ঞান থাকলে ঠাণ্ডা পানি, খাবার স্যালাইন-শরবত খাওয়ান, সম্ভব হলে বগলে, কুচকিতে, কাঁধে ও কপালে বরফের প্যাক দিন। খেয়াল রাখা প্রয়োজন, আক্রান্ত রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস ও নাড়ীর স্পন্দন চলছে কিনা। মাথায় ঠাণ্ডা পানি ঢালতে পারেন। উন্নতি না হলে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। শিশু, বয়স্ক ও দুরারোগ্য রোগীদের প্রতি সতর্কতা ও সচেতনতা প্রয়োজন। একমাত্র সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করলেই হিট স্ট্রোকসহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।

    লেখক: বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, সাবেক পরিচালক; সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।

    Share on facebook
    Share on twitter
    Share on whatsapp
    Share on linkedin
    Share on telegram
    Share on skype
    Share on pinterest
    Share on email
    Share on print

    সর্বাধিক পঠিত

    আমাদের ফেসবুক

    আমাদের ইউটিউব