চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিস এখন সম্পূর্ণরূপে বদলে গেছে। নেই এখন দালালদের উৎপাত। জমির নামজারি, মিচ মামলা, তদন্ত, দাগ নম্বর সংশোধনসহ জমি সংক্রান্ত অন্যান্য কাজে মাসের পর মাস ঘুরতে হয় না। নেই হয়রানি। নেই উৎকোচের অত্যাচার। নেই দালালের দৌরাত্ম।
উৎকোচ না দিলে ফাইল নড়ে না এমন চিত্র আর এই ভূমি অফিসে নেই। এক সময় ভূমি অফিসের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে সাধারণ মানুষ ভূমি অফিসে আসতে ভয় পেত। আর দালালদের উৎপাত ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এখন দালালদের উৎপাত নেই।
সাধারণ মানুষ যেকোনো অভিযোগ দিতে সরাসরি সহকারী কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরীর কাছে আসছেন। নিজেদের অভাব অভিযোগের কথা নিজেরাই কর্মকর্তার কাছে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা পাচ্ছেন।
এতে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে ভূমি অফিসে খোলা হয়েছে সেবা সহায়তা কেন্দ্র, সুবিন্যস্ত রেকর্ড রুম, তথ্য বাতায়ন, সিটিজোন চার্টার, ওয়েটিং রুম, ডিজিটাল সাইনবোর্ড, শুনানির মাধ্যমে জবাবদিহিতাসহ তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ভূমি সেবা।
এছাড়াও রেকর্ড রুম সুন্দর ভাবে বছরওয়ারী সাজানো হয়েছে। আগে অতীতের কোন তথ্য উপাত্ত বা মামলার নথিপত্র দেখতে অনেক সময় লেগে যেত। নথি পেতে টাকা লাগতো। এখন আবেদন করলেই ফ্রিতে সমস্ত নথিপত্রের কাগজ পেয়ে যাচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা। উপজেলা ভূমি অফিসের চারপাশ সুসজ্জিতভাবে সুচারুরুপে সাজানো-গোছানো। সব মিলিয়ে পাল্টে গেছে কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিস।
অফিসে সেবা পেতে আসা লোকজন জানান, পিযুষ কুমার চৌধুরী যোগদানের পর থেকে ধীরে ধীরে বদলে দিয়েছেন অফিসের অবস্থানসহ বিভিন্ন সেবাসমূহ। শুরু হয় ভূমি অফিস বদলে দেয়ার গল্প।
তিনি প্রায় এক বছর তিন মাস ধরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে অফিসের সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এতে করে উপজেলা ভূমি অফিসে বৃদ্ধি পেয়েছে সেবার মান। সেবা পেয়ে ভূক্তভোগী জনসাধারণের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
যদিও বর্তমান সময়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। দেখা মিললেও একটা কথার জায়গায় দুইটা কথা বলা যায় না। সেখানে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী।
সকলে জানেন কর্ণফুলীতে ভূমি সেবা নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু বর্তমান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নানামুখী পদক্ষেপের ফলে ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের কাছে ভূমি অফিস একটি জনবান্ধব অফিসে পরিণত হয়েছে। সেবা প্রার্থীদের প্রত্যেকের সঙ্গে তাঁদের সমস্যা নিয়ে কথা বলে সমাধান দিচ্ছেন এসিল্যাণ্ড নিজেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জনগণের দোড়গোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিজ অফিস তহসিলদারদের দেওয়া রিপোর্ট/ প্রতিবেদন নিয়েও দু’পক্ষকে ডেকে সরাসরি শুনানি করেন। এতে তহসিলদার ও বাদি-বিবাদীর নানা হেরফের উঠে আসে। সুবিধা হয় ন্যায় সঙ্গত সেবা পেতে।
শিকলবাহার সেবাপ্রার্থী আলমগীর কবির বলেন, ‘এসিল্যান্ড সাহেব অনেক ভালো মানুষ। তিনি আমার সব কথা শুনলেন এবং পরামর্শ দিলেন। খুব ভালো লাগছে। আগে কিছু দালালদের কারণে এসিল্যাণ্ড বরাবরে যাওয়া যেতো না। যেকোনো মানুষ যেকোনো সময় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সঙ্গে এখন কথা বলতে পারছেন। উনার সেবা ও আচরণে আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট।’
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, বিভিন্ন সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সরকারি খাস জমি ও নদীর জমি উদ্ধার, নদী থেকে ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন বন্ধ, অবৈধ অনুমোদনহীন খাদ্য কারখানা বন্ধ, প্রটেকশনহীন এলপিজি গ্যাস কেনা-বেচা, অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়ানস্টিক, অপরিছন্ন হোটেল এবং সরকারি খাল দখলসহ নানা বিষয়ে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের দণ্ড ও সেবামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক স্যারের দিক নির্দেশনায় আমাদের অফিসে আসা সকলের জন্য জনবান্ধব জনসেবা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। একজন মানুষও যাতে ভোগান্তির স্বীকার না হয় সেজন্য আমরা সর্বদা তৎপর রয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইনগত কারণে বিভিন্ন সময় সকল মানুষকে সকল সেবা প্রদান করা সম্ভব হয় না। তারপরও আমরা সব সময় চেষ্টা করি সর্বোচ্চ সেবা দিতে। কর্ণফুলী উপজেলায় ভূমি নিয়ে ভূক্তভোগী মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। যাতে মাননীয় ভূমিমন্ত্রীর নেওয়া সকল পদক্ষেপের সুফল জনগণ ঘরে বসেই পায়।’