আজ বৃহস্পতিবার ║ ৭ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ১৩ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি

সর্বশেষ:

    তারুণ্যের শক্তিতে আগামীর বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ: ডা. শাহাদাত

    Share on facebook
    Share on whatsapp
    Share on twitter

    চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে কোনো অসাধ্য সাধন করা সম্ভব, তরুণরা বাধা ডিঙাতে পারে, তরুণরা জয় করতে জানেন। বাংলাদেশের তরুণরা দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এবং সর্বশেষ ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে দেখিয়ে দিয়েছেন, তাদের অধিকার ক্ষুন্ন হলে, তাদের অবহেলা করা হলে, তাদের দমনের চেষ্টা করা হলে, তারা রুখে দাঁড়াতে জানে, তারা পাথরকে ভেঙে চুরমার করতে পারে। এই তারুণ্যের শক্তিতেই আগামীর বাংলাদেশ বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করবে। ইয়ুথ ভয়েস এর মতো সংগঠনের কার্যক্রম এবং এই সংগঠনের নেতৃত্বের দক্ষতায় বাংলাদেশ এখন সেই পথেই যাত্রা করেছে। সে জন্য আমি এই সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং তরুণদের বলবো, আগামীর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে, নিজেকে ভালোবাসতে হবে, দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।

    তিনি শনিবার (২ আগস্ট) বিকালে চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড়স্থ প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির সেন্ট্রাল অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশের অন্যতম যুব নেতৃত্বভিত্তিক সংগঠন ইয়ুথ ভয়েস অব বাংলাদেশ এর চট্টগ্রাম সিটি ওয়ার্কিং কমিটির জেনারেল কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

    সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল “নেতৃত্বে তারুণ্য: নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা”। দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনে, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশে ইয়ুথ ভয়েস অব বাংলাদেশ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

    এ সময় তরুণদের উদ্দেশে দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও ইতিবাচক মনোভাব ধারণের আহ্বান জানিয়ে ডা. শাহাদাত বলেন, এই বাংলাদেশকে বদলে দিতে হলে নেতৃত্ব দিতে হবে তরুণদের। যুগে যুগে তরুণরাই দেশের সব বিপ্লবে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে তারুণ্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সব ক্ষেত্রেই তরুণরাই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। জুলাই আন্দোলনেও তারুণ্যরা নেতৃত্ব দিয়েছে। আগামীতেও দেশ গঠনে এগিয়ে আসবে তারুণ্যরা।

    তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, হযরত মোহাম্মদ (সা.) তরুণ বয়সে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন শুরু করেছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তরুণ বয়সে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন এবং বেগম খালেদা জিয়াও গৃহবধূ থেকে রাজপথে এসে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে। তারুণ্য আর আপসহীন নেতৃত্বই দেশকে রক্ষা করেছে।

    তিনি বলেন, আজকের বাস্তবতায় আমাদের তরুণ সমাজের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দেশপ্রেম ধারণ করা। তারা যেন শুধু সমালোচনা না করে, সমস্যা সমাধানের চিন্তা করে। টরেন্টো সফরে সেখানে পড়াশোনা করা তরুণদের বলেছি, তোমরা শিক্ষা অর্জনের পর দেশের টেকনোলজি ট্রান্সফার করো। বাংলাদেশকে ভালোবেসে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।

    মেয়র বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ তরুণ রয়েছে। তাদের অনেকেই বিদেশে যাওয়ার চিন্তা করছে। কারণ তারা মনে করে বাংলাদেশ নিরাপদ নয়। আমাদের দায়িত্ব হলো এই মনোভাব পরিবর্তন করা। তরুণদের মধ্যে দেশপ্রেম ও সততা জাগিয়ে তুলতে হবে।

    নিজ উদ্যোগ ‘ক্লিন, গ্রিন, হেলদি এবং সেফ চট্টগ্রাম’ বাস্তবায়নের জন্য তরুণদের পাশে চাওয়ার কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, ইউথ বয়েজ অব বাংলাদেশ আমার এই যাত্রায় পাশে থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের স্যাক্রিফাইস করার মানসিকতা আমাদের বাংলাদেশকে দুর্নীতি ও বৈষম্য মুক্ত এক নতুন বাংলাদেশে পরিণত করবে।

    ডা. শাহাদাত বলেন, দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নেতৃস্থানীয় ভূমিকা নিতে হবে তারুণ্যকেই। দেশপ্রেম ও সততা ছাড়া কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়।

    এবারের সম্মেলনে চট্টগ্রামের ৪২টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্বাচিত ১৪৫ জন মেধাবী তরুণ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আগত প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থীও এই সম্মেলনে অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন উদীয়মান আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তা ও সমাজকর্মীরা, যারা আগামীর উন্নত, মানবিক ও নেতৃত্বগুণে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন বুকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছেন।

    ইয়ুথ ভয়েস অব বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার তারেক আকবর খোন্দকারের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. ফরিদ এ সোবহানী। বিশেষ বক্তা ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্ট এর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আইন কর্মকর্তা (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ), ব্যারিস্টার শাহনেওয়াজ মুনির এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি কমিটির সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. মুনিরা তারেক খোন্দকার, সাধারণ সম্পাদক আরেফিন বিল্লাহ, বর্তমান কমিটির কোঅর্ডিনেটর মোহাম্মদ আশিকুর রহমান, প্রথম কমিটির সভাপতি চৌধুরী কে এন এম রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান আলী চৌধুরী ও ব্যারিস্টার ফয়সাল দস্তগীর।

    সভাপতির বক্তব্যে ব্যারিস্টার তাকে আকবর খোন্দকার বলেন, যুবসমাজকে শুধু পড়াশোনার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ না থেকে আত্ম-উন্নয়নের উপরও গুরুত্ব দিতে হবে। নেতৃত্বের গুণাবলী চর্চা ও সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য কেবল পুঁথিগত বিদ্যা নয় — এর সঙ্গে নৈতিকতা, আদর্শ ও দেশপ্রেম গড়ে তোলা জরুরি। তরুণদের উচিত শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধ ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে দেশ ও সমাজের কল্যাণে কাজ করা।

    বক্তারা ইয়ুথ ভয়েস অব বাংলাদেশের এই উদ্যোগকে যুব নেতৃত্ব বিকাশ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা তৈরির এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন। ইয়ুথ ভয়েস অব বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, নেতৃত্ববান, মানবিক ও সচেতন যুবসমাজই আগামীর বাংলাদেশকে একটি উন্নত, শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে সক্ষম।

    Share on facebook
    Share on twitter
    Share on whatsapp
    Share on linkedin
    Share on telegram
    Share on skype
    Share on pinterest
    Share on email
    Share on print