
মেরামতের পরে পুরাতন এই কালুরঘাট সেতু দিয়ে আরো ৩০ বছর ঝুঁকিমুক্তভাবে ট্রেন চলাচল করতে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকালে সেতুর মেরামত কাজ পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
এসময় তিনি বলেন, কালুরঘাট সেতু অনেক পুরোনো। এ সেতু মেরামতের কাজ চলছে, যাতে কক্সবাজার রুটের ট্রেন নিরাপদে চলতে পারে। সেতুর ওপর ১৫ টন মিটারগেজ ইঞ্জিনের ট্রেন আগামী ৩০ বছর ঝুঁকিমুক্তভাবেই চলতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ নভেম্বর দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করবেন। তার আগেই কালুরঘাট সেতু সংস্কার করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করার কাজ চলছে।
নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, কক্সবাজার রেলপথে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন দ্রুত গতির ভারী ইঞ্জিনের ট্রেন চলাচল করবে। সংস্কার ছাড়া কালুরঘাট সেতু দিয়ে এ ট্রেন চালানো সম্ভব নয়। আগামী বছরে আনুষ্ঠানিকভাবে চার লেইনের নতুন সড়ক সেতুর কাজও শুরু হবে বলেও জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী।
তিনি আরোও বলেন, আমাদের যে ইঞ্জিন ছিল, সেটি ১২ টনের। আমরা জানি যে, এই সেতু অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।এটার স্ট্রেন্থ যাতে বাড়ানো যায়, সে কারণে আমরা প্রকল্প গ্রহণ করেছি। কাজ চলমান। এই ব্রীজটি বাদ দিয়ে নতুন একটি ব্রীজ কালুরঘাটে হবে। যেটি এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। আমরা আশা করছি, আগামী বছর এ নতুন সেতুর আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে। ডাবল লেইন মিটারগেজ এবং ফোর লেইনের সড়ক থাকবে একই ব্রিজের ওপর। কাজেই সেটি না হওয়া পর্যন্ত এই ব্রিজটি যেন আমরা ব্যবহার করতে পারি, সেভাবেই এটি তৈরি করা হচ্ছে। ২ নভেম্বর আমরা এখানে আসব এবং ট্রায়াল রান করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১২ নভেম্বর উদ্বোধনের পূর্বেই এই রেললাইনটি ভালোভাবে তৈরি হয়েছে কিনা সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হতে চাই।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই এই ব্রিজের কাজ শেষ হবে। তবে ছোটখাটো কিছু কাজ থাকতে পারে। একই ব্রিজ দিয়ে ট্রেন যায়,যানবাহন চলাচল করে, মানুষও চলাচল করে। সেই পথচারীদের জন্য আমরা আলাদা করে একটা লেইন করে দিয়েছি। মূল ব্রিজের ভিতরে আসতে হবে না। এটি এর আগে ছিল না। আমরা আরো ৬ ফিট ওয়াকওয়ে করে দিয়েছি, সেটার কাজ শেষ হতে আরো এক-দুই মাস সময় লাগতে পারে। আগে মূল ব্রিজের কাজ শেষ হোক, এরপর ওয়াকওয়ের কাজ শুরু হবে। এটা নতুন একটা সংযোজন।
জানা যায়, এ সেতুর সংস্কার কাজের জন্য চলতি মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত সকল প্রকার যানবাহন পারাপার বন্ধ ঘোষণা করে রেলওয়ে। এর বিকল্প পথ হিসেবে সেতুর পাশে কর্ণফুলী নদীতে ফেরি সার্ভিস চালু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
কালুরঘাট সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করার জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে শ্রমিকরা। সেতু সংস্কার ছাড়া এই রেলপথে হাই লোডের ইঞ্জিনবাহী ট্রেন চালানো সম্ভব নয়। তাই গত ১ আগস্ট থেকে ৯২ বছরের পুরোনো কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছে। ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্ববধানে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে রেলপথ বসানোর কাজ। প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি সংস্কার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর বিট্রিশ আমলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে ট্রেন চলাচলের জন্য কালুরঘাট ৬৩৮ মিটার সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ডেক বসিয়ে ১৯৬২ সালে রেল সেতুটিকে অন্যান্য যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হলে যান চলাচল শুরু হয়। এর আগে সেতুটি দুইবার সংস্কার করা হয়েছিল। তৃতীয়বারের মত সংস্কার করা হচ্ছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেল যাতায়াতের জন্য।