
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু হয়েছে পাঁচ দিন আগে। চট্টগ্রামের অন্য আসনগুলোতে প্রার্থীরা প্রতীক পেয়েই পুরোদমে প্রচার প্রচারণায় নেমেছেন। কিন্তু চট্টগ্রাম-১৩ আসনে দেখা মিলেছে ভিন্ন চিত্রের।
প্রতীক নেওয়া সাত প্রার্থীর মধ্যে কেবল নৌকার পোস্টারই দৃশ্যমান হয়েছে নির্বাচনি এলাকাজুড়ে। বাকি ৬ প্রার্থীর প্রচারণা এখনো চোখে পড়ার মতো হয়নি বলে জানিয়ে কর্ণফুলী আনোয়ারার ভোটাররা জানান, আমরা চাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক।
এ আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) ও তৃণমূল বিএনপি সহ ৬ প্রার্থী চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও তারা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছেন বলে জানা যায়। প্রতীক বরাদ্দের পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও নির্বাচনি প্রচারে তেমন নামেননি তাঁরা। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাঁরা হয়তো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে যদিও হতাশার ছাপ ফুটে উঠেছে।
চট্টগ্রাম-১৩ আসনটি আনোয়ারা ও কর্ণফুলী দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি, প্রতিমন্ত্রী ও পূর্ণ মন্ত্রীর স্বাদ পেয়েছেন। ফলে আসনটি অনেকেই ভিআইপি আসন বলে মন্তব্য করেছেন।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ এলাকায় ঝুলছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির পোস্টার আর পোস্টার। মইজ্জারটেক টু ব্রিজঘাট এলাকায় ঝুলছে নৌকার পোস্টার।
জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম টুকু বলেন, ‘এই আসনে ভূমিমন্ত্রীর কোন বিকল্প নেই। তিনি দল মত নির্বিশেষে সকলের কাছে জনপ্রিয় নেতা। গত ১৫ বছরে তিনি কর্ণফুলী-আনোয়ারায় শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন করেছেন। যা এর আগে কখনো কেউ করতে পারেনি। এছাড়াও ক্লিন ইমেজের স্বচ্ছ মন্ত্রী হিসেবেও তিনি দেশে বিদেশে সমাদৃত। এবারো আমরা সাধারণ জনগণের কাছে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রত্যাশা করি। যাতে নৌকার বিজয় নিশ্চিত হয়। ’
জুলধা এলাকার আজম খাঁন ও শিকলবাহার মোহাম্মদ করিম এবং চরপাথরঘাটা এলাকার আনোয়ার হোসেন নামে তিন ভোটার জানান , ‘এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তেমন নেই বললেই চলে। বিজয় হতে শুধুমাত্র ৭ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে নৌকা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। নৌকার মিছিল ও গণসংযোগ হলেও বাকি প্রার্থী গুলোর কোনো কার্যক্রম নেই। তাঁদেরকে ভোটের মাঠে প্রচার প্রচারণা করতেও দেখছি না। যদিও আমরা চাই ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক। ভোটের মাধ্যমে যেই আসুক আমাদের সমস্যা নেই। জনগণের ভোটে যেন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। সেটাই প্রত্যাশা করি।’
এ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন- তৃণমূল বিএনপি থেকে মকবুল আহম্মদ চৌধুরী (সোনালী আশঁ), জাতীয় পার্টি থেকে আবদুর রব চৌধুরী (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মোহাম্মদ আবুল হোসেন (মোমবাতি), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ সৈয়দ মুহাম্মদ হামেদ হোসাইন (চেয়ার), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি মো. আরিফ মঈন উদ্দীন (একতারা) ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন মৌলভী রশিদুল হক (বটগাছ)।
এ আসনে বিগত সময়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। কর্ণফুলী-আনোয়ারার আওয়ামী লীগ ও তাঁর অঙ্গসংগঠনের নেতারাও বেশ সক্রিয়। দুই উপজেলায় মন্ত্রীর জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে। বহু আগেই নেতারাও মাঠ গুছিয়ে রেখেছেন। সাইফুজ্জামান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকায় তিনি প্রতি সপ্তাহে জনসাধারণ ও নেতাকর্মীদের সময় দেন, এলাকার মানুষের খোঁজ-খবর নেন। দলের ভেতরে বাহিরের কাউকে তিনি অন্যায় করলে প্রশ্রয় দেননি বলে প্রচার রয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৩ আসনের জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী আবদুর রব চৌধুরী টিপু বলেন, ‘প্রচারণা কাল থেকে শুরু করেছি। আনোয়ারায় গণসংযোগে আছি। তবে এখনো জনসভার কোনো পরিকল্পনা নেই আমার। কর্ণফুলীতে আগামীকাল প্রচারণায় যাবো।’
তৃণমূল বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মকবুল আহম্মেদ বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চলতেছে। আমি প্রচারণায় আছি। আর ১২ থেকে ১৩ দিন সময় আছে। এর মধ্যে আমরা নির্বাচনী অফিস ও প্রতিটি এলাকায় প্রচারণা ও জনসভা চালাবো (ইনশাআল্লাহ)। এখনো পর্যন্ত সুন্দর ভাবে প্রচারণা চালাচ্ছি।’
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি। আজকে আনোয়ারা চুরুত বিবি জামে মসজিদে নামাজ আদায় করেছি। সেখানেও প্রচারণা চালিয়েছি। বিকেলে বটতলী শাহ মোহছেন আউলিয়ার মাজার এলাকায় গণসংযোগ করব। এছাড়াও প্রতিটি এলাকায় প্রচার প্রচারণা চালাব ধাপে ধাপে। এখনো পর্যন্ত কোনো রকমের বাঁধা আসেনি। আমরা সুন্দর একটি নির্বাচন চাই।’
জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-১৩ আসনে দুটি উপজেলা। আনোয়ারা ও কর্ণফুলী। আনোয়ারায় ১১টি ইউনিয়ন ও কর্ণফুলীতে ৫ টি ইউনিয়ন। আনোয়ারায় ভোটকেন্দ্র ৭২ টি, কর্ণফুলীতে ৪৬টি মোট দুই উপজেলায় ১১৮টি। আনোয়ারায় ভোটকক্ষ ৪৮৪টি, কর্ণফুলীতে ২৬৮টি মোট ৭৫২টি কক্ষ।
আনোয়ারায় পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২২ হাজার ১১৭ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৮ হাজার ৪৯০ জন। কর্ণফুলীতে পুরুষ ভোটার ৬৭ হাজার ১২৬ জন ও মহিলা ভোটার ৫৯ হাজার ১৩১ জন। দুই উপজেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬৪ জন।