
গণমাধ্যমকে বলা হয় সমাজের দর্পণ, সমাজের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনে সহায়তা করাই গণমাধ্যমের প্রধানতম কাজ। রাষ্ট্র এবং জনগণের মাঝে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করাও গণমাধ্যমের অন্যতম উদ্দেশ্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় রাষ্ট্রযন্ত্র তথা সরকারকে সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান এবং সমাজের বিদ্যমান ব্যবস্থাকে জনকল্যাণমূখী করতেও গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এজন্যই গণমাধ্যমকে রাষ্টের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়।
গণমাধ্যম যেমন সমাজের দর্পণ, তেমনি সাংবাদিকরাও গণমাধ্যমের প্রাণ। সাংবাদিকতা একটি অনন্য পেশা যেখানে আছে নানামুখী প্রতিকূলতা এবং দুঃসাহসিক আনন্দের মিশেল। সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং এবং ঝুঁকিপূর্ণ পেশা এতে কোন সন্দেহ নেই,সারা পৃথিবী জুড়েই এ পেশার চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমাজের মূল সত্যকে তুলে ধরেন। পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা কালো অন্ধকার,অন্যায়, দুর্নীতি, মিথ্যার বেসাতি আর জঞ্জাল দূরীভূত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যায় সাংবাদিক তথা গণমাধ্যম কর্মীরা। অনেকক্ষেত্রে সমাজের নানাবিধ সমস্যা তুলে ধরতে গিয়ে অন্যায় রোষানলে পড়তে হয় রাষ্ট্রযন্ত্র এবং প্রভাবশালীদেরও।
সাংবাদিকরা অনেকসময় সত্য তুলে ধরার মাশুল দিতে হয় নিজেদের জীবনের বিনিময়ে,এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। বলা হয়ে থাকে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কট্টর সমালোচনার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়। এধরনের অসংখ্য নির্মম ও রহস্যজনক হত্যাকান্ডের স্বীকার হতে হয় সাংবাদিকদের। বহুমুখী চ্যালেঞ্জের পরও সাংবাদিকতা একটি আকর্ষণীয় ও অপার আনন্দের পেশা। এখানে আছে সমাজ, দেশ, জাতি সর্বোপরি পৃথিবীর জন্য কিছু করতে পারার অপরিশীম তৃপ্তিও।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানের লেখা গণতান্ত্রিক রাষ্টের চতুর্থ স্তম্ভ স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম শিরোনামে একটি কলাম পড়েছিলাম বহুদিন আগে,সেখানে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসনের কথা, জেফারসন একবার বলেছিলেন, আমাকে যদি একটি বিকল্প দেওয়া হয় যে তুমি কি সংবাদপত্র বিহীন সরকার চাও, না সরকার বিহীন সংবাদপত্র চাও? তখন আমি পরেরটা বেচে নেব। ঐখানে তিনি আরো উল্লেখ করেন সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের করা সংবাদপত্র সম্পর্কে একটি মন্তব্য, নেপোলিয়ন বলেছিলেন, ” চারটি আক্রমণাত্মক সংবাদপত্র হাজারটা বেয়নেটের চেয়েও ক্ষতিকর। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতে, কোনো দেশে স্বাধীন গণমাধ্যম থাকলে সে দেশে দুর্ভিক্ষ হানা দিতে পারে না।
সংবাদপত্রের গুরুত্ব সর্বজন বিদিত, আর সারা পৃথিবী জুড়েই সাংবাদিকতা মহান পেশা হিসেবে স্বীকৃত। সাংবাদিকদের বলা হয় জাতির জাগ্রত বিবেক। সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিকতা দেশ, জাতি এবং পৃথিবীর জন্য মঙ্গল বয়ে আনে। এই পেশায় যেমন বিশালত্ব আছে তেমনি আছে বৈচিত্র্য। যদি কেউ বলেন সাংবাদিকতা পেশা দুঃসাহসিক আনন্দের এবং নানামুখী চ্যালেঞ্জের অনন্য সম্মীলন তবে মনে হয় না তা বাড়িয়ে বলা হবে।
লেখকঃ রেফায়েত উল্যাহ রুপক
শিক্ষার্থী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।