ইউনেস্কোর বিবেচনায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণই কার্যকর অর্থে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে। এই ভাষণ গোটা বিশ্বের উত্তর-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রসমূহের সর্বজনীন গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ব্যর্থতার এক অকাট্য প্রামাণিক দলিল। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল একটি উপস্থিত-বক্তৃতা অর্থাৎ ভাষণটির কোনো লিখিত রূপ ছিল না। ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটে রক্ষিত এমন তথ্যের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সোসাইটি। সংগঠনের পক্ষে সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আহসান উদ্দিন খাঁন এবং সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক এই বিবৃতি দিয়েছেন। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে সংগঠনের আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা হাসানুল আলম মিথুন বলেছেন, যেহেতু আমাদের এই সংগঠনটি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি সোপান তাই এই দিনটি উপলক্ষে তাঁরা একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা বাংলাদেশের সংবিধানের এই চার মূলনীতি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির কথা বলেছেন। তাঁর বক্তৃতায় বাঙালি জাতির উপর তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের নির্যাতনের করুণ বর্ণনাও দিয়েছেন।
একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বাঙালি জাতির গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবি তুলেছেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে একদিকে যেমন বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির দাবি জানিয়েছেন, তেমনি অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমজীবী গরিব মানুষের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদ চেতনার প্রতিষ্ঠায় হিন্দু, মুসলমান, বাঙালি, অবাঙালি সবার কথাই বলেছেন। একই সাথে তিনি বলেছিলেন, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি তবু আপনারা যুদ্ধেও জন্য প্রস্তুত থাকবেন, শত্রু মোকাবেলা করার জন্য যার কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এই ঘোষণার সাথে সাথেই বীর বাঙ্গালিরা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সুতরাং এই ভাষণকে স্বাধীতার ঘোষণাই বলা যায়।
ভাষণে বঙ্গুবন্ধু বলেছিলেন, “আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, তারা বাঁচতে চায়। তারা অধিকার পেতে চায়। ২৩ বছরের ইতিহাস বাংলার মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। ২৩ বছরের ইতিহাস, বাংলার মানুষের মুমূর্ষু আর্তনাদের ইতিহাস, রক্তদানের করুণ ইতিহাস। নির্যাতিত মানুষের কান্নার ইতিহাস।” এই ইতিহাস পরিবর্তনের জন্য তিনি মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন, সেদিন তিনি তাঁর ভাষণে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন তবে গরীবের যাতে কষ্ট না হয়, সেজন্য রিকশা, ঘোড়ার গাড়ি, রেল চলবে, লঞ্চ চলবে চলার পক্ষে ছিলেন। ২৮ তারিখে কর্মচারীদের বেতন নেয়ার কথাও বলেছেন। হরতালে যে সমস্ত শ্রমিক ভাইয়েরা যোগদান করেছে, প্রত্যেকটা শিল্পের মালিককে তাদের বেতন পৌঁছে দেয়ার কথাও বলেছেন।
সম্পূর্ণ বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বাঙালির গণতান্ত্রিক অধিকারের ন্যায্য দাবি জানিয়েছেন। তিনি যে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন তার মূল উদ্দেশ্যই ছিল বাঙালির গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সে স্বপ্ন পুরণ করছে আজ তারই কণ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার নির্দেশ পালনের জন্য আমাদের সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে। কোন অপশক্তি যাতে এই দেশের জনগনের উপর ঝুলুম করতে না পারে। স্বাধীনতা বিরোধী চক্র যাতে দেশকে পিছিয়ে নেয়ার চক্রান্ত করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।