আজ শনিবার ║ ২রা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আজ শনিবার ║ ২রা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ║১৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ║ ৩০শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ:

    প্রবারণা” পূর্ণিমার তাৎপর্য

    Share on facebook
    Share on whatsapp
    Share on twitter

    প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। এর অপর নাম আশ্বিনী পূর্ণিমা । ‘ প্রবারণা’ শব্দের অর্থ প্রকৃষ্ট রূপে বরণ করা , নিষেধ করা ইত্যাদি । ‘ বরণ করা ‘ অর্থে বিশুদ্ধ বিনয়াচারে জীবন পরিচালনা করার আদর্শে ব্রতী হওয়া, আর ‘ নিষেধ ‘ অর্থে আদর্শ ও ধর্মাচারের পরিপন্থী কর্মসমূহ পরিহার করাকে বোঝায় । বর্ষাবাস সমাপনান্তে ভিক্ষু সংঘ আপন আপন দোষক্রটি অপর ভিক্ষু সংঘের নিকট প্রকাশ করে তার প্রায়শ্চিত্ত বিধানের আহ্বান জানায় । এমন কি অজ্ঞাতসারে কোন অপরাধ হয়ে থাকলে তার জন্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয় । অর্থাৎ দৈনন্দিন জীবনাবসানের প্রতিটি মূহুর্তে সচেতন ভাবে ঘটিতব্য সর্ববিধ দোষকে বর্জন করে গুণের প্রতি আকৃষ্ট থাকার চেতনা সৃষ্টি করাই প্রবারণার উদ্দেশ্য । শ্রাবস্তীর জেতবনে অবস্থান কালে গৌতম বুদ্ধ ভিক্ষু সংঘের পালনীয় হিসেবে এর প্রবর্তন করেন । আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে প্রবারণা পালিত হয় । প্রবারণার পর ভিক্ষু সংঘকে অধীন জ্ঞান প্রচারের জন্য গ্রামে গঞ্জে যেতে হয় । এ সময় তারা কল্যাণের বাণী প্রচার করেন , যাতে দেব মনুষ্যসহ সব প্রাণীর কল্যাণ সাধিত হয়। এভাবে প্রবারণা শেষ হওয়ার পর প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে পালিত হয় কঠিন চীবর দান উৎসব। প্রবারণা পূর্ণিমার অন্য একটি উৎসবময় দিক হলো ফানুস উত্তোলন । বৌদ্ধশাস্ত্র মতে গৌতম বুদ্ধের আধ্যাত্মিক শক্তিবলে দেবলোকে গিয়ে মাকে ধর্মদেশনা করে এদিন স্বর্গ থেকে মর্ত্যে অবতরণ করেন । এ কারণে বৌদ্ধগণ প্রবারণা পূর্ণিমায় আকাশে প্রদীপ প্রজ্বলনের প্রতীক রুপে ফানুস উত্তোলন করে । এই সংক্রান্ত আরেকটি কাহিনী হলো : সিদ্ধার্থ গৌতম কোন এক সময় মাথার একগুচ্ছ চুল কেটে বলেছিলেন তিনি যদি সিদ্ধি লাভের উপযুক্ত হন তাহলে এই কর্তিত চুল যেন নিম্নে পতিত না হয়ে ঊর্ধ্বে উঠে যায় । তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী চুলগুলো আকাশে উঠে গিয়েছিল । তাই বুদ্ধের কেশ ধাতু পূজার স্মৃতি স্বরুপ আকাশে ঐ ফানুস ওড়ানো হয় । এ কারণে আত্নবিশ্লেষণের শিক্ষা , মাতৃ কর্তব্য পালন ও বিনয় বিধান অনুশীলনের বহুবিধ মহিমায় এই প্রবারণা পূর্ণিমা মহিমান্বিত । প্রতিবছর আশ্বিনী পূর্ণিমায় বৌদ্ধরা শ্রদ্ধা ভক্তি সহকারে প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করে । এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় বুদ্ধপূজাসহ পূণ্যানুষ্ঠানের । বাঙালি বৌদ্ধদের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে এ পূর্ণিমার আবেদন খুবই গভীর । এ সময় জাতিধর্ম নির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষ সমবেত হয়ে উৎসবে মেতে ওঠে । এটি একটি অসম্প্রদায়িক সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয় । এ উৎসব একদিকে বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘের মধ্যে পারস্পরিক মৈত্রী, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলা বৃদ্ধি করে অপর দিকে জাতি- ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে বন্ধুত্ব ও অসম্প্রদায়িক ভাবধারার সুদৃঢ় হয় । প্রবারণা চতুর্দশী অথবা পঞ্চদশী তিথিতে করতে হয় । প্রবারণা কর্ম চার প্রকার । যথা : (১) ধর্ম বিরুদ্ধ বর্গের ( সংঘের একাংশ) প্রবারণা , (২) ধর্ম বিরুদ্ধ সমগ্র সংঘের প্রবারণা, (৩) ধর্মানুকূল বর্গের প্রবারণা এবং (৪) ধর্মানুকূল সমগ্র সংঘের প্রবারণা । তন্মধ্যে শেষোক্ত প্রবারণা কর্ম করাই বিধেয় ।

    Share on facebook
    Share on twitter
    Share on whatsapp
    Share on linkedin
    Share on telegram
    Share on skype
    Share on pinterest
    Share on email
    Share on print

    সর্বাধিক পঠিত

    আমাদের ফেসবুক

    আমাদের ইউটিউব

    সর্বশেষ খবর