দেশের প্রথম নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করা হবে আগামী ২৮ অক্টোবর।উদ্বোধনকে ঘিরে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পের দুই প্রান্তে চলছে নানা প্রস্তুতি। ১০ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত টানেল দিয়ে প্রতিদিন ১৭ হাজার ২৬০টি যানবাহন পার হতে পারবে। টানেল প্রকল্পের দুই প্রান্তে এখন চলছে সাজসজ্জার কাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ মেগা প্রকল্পটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারা প্রান্তে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর,উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান,দৈনিক ১৭ হাজার ২৬০টি যানবাহন চলাচল করতে পারবে টানেল চালু হওয়ার দিন থেকে ।সে অনুযায়ী টানেল দিয়ে বছরে ৭৬ লাখ যানবাহন চলাচল করতে পারবে। টানেলের সম্ভাব্য সমীক্ষা তথ্যানুযায়ী,২০২৫ সালের পর থেকে টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। এ ছাড়া ২০৩০ সালে যানবাহন চলাচলের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি।
এদিকে,সোমবার গত (৯ অক্টোবর) টানেল এলাকায় সড়ক নির্মাণের কাজ পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি টানেলের পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে বিমানবন্দর সড়কের কার্পেটিং ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ পরিদর্শন করেন।
এ সময় মেয়র দৈনিক সকালের সময় কে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত
চট্টগ্রাম।চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও আনোয়ারাকে সংযুক্ত করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে প্রস্তুত।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পটি পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেন,আগামী ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলের উদ্বোধন করা হলেও আনোয়ারা প্রান্তে হবে সুধী সমাবেশ। এতে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখবেন। ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটারের এ টানেল শুধু দুই পাড়কে সংযুক্ত করেনি, ওয়ান সিটি টু টাউন কনসেপ্ট বাস্তবায়িত হয়েছে।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে টানেলটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। চার লেন বিশিষ্ট দুটি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। গত বছরের ২৬ নভেম্বর টানেলের দক্ষিণ প্রান্তের একটি টিউবের পূর্তকাজের সমাপ্তি উদযাপন করা হয়েছে। এই উদযাপন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।মূল টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ফ্লাইওভার থাকবে।
উদ্বোধন প্রসঙ্গে টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ দৈনিক সকালের সময় কে বলেন, যানবাহন চলাচলের জন্য এখন পুরোপুরি প্রস্তুত টানেল। ইতোমধ্যে একাধিক বার পরীক্ষামূলক গাড়ি চলাচল করেছে। আগামী ২৮ অক্টোবর এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পরদিন ২৯ অক্টোবর থেকে টানেল যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। বর্তমানে পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৯ শতাংশ।টানেলের নিরাপত্তায় ১০০টির বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চালু হলে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন একধাপ এগিয়ে যাবে। টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম নগরীর পরিধি বাড়বে। টানেলের এক প্রান্তে চট্টগ্রাম শহর। অপর প্রান্তে রয়েছে আনোয়ারা উপজেলা। টানেলের শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা। পরে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১০ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকা। এরমধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ দশমিক ১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।