আজ মঙ্গলবার ║ ১৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║৩১শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ২০শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

সর্বশেষ:

    ফ্যাসিবাদের ধারাবাহিকতা অব্যাহত

    কমিশন বাণিজ্যে বেপরোয়া পাউবো’র তানজির

    দুর্নীতির টাকায় বিলাসি জীবন

    Share on facebook
    Share on whatsapp
    Share on twitter

    জনরোষে পতিত ফ্যাসিবাদ সরকারের অনৈতিক সুবিধাভোগী বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজীর সাইফের বিরুদ্ধে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠেছে। তৎকালীন মন্ত্রী, সচিব ও উর্ধ্বতন আমালাদের ম্যানেজ করে চালিয়ে যাওয়া বেপরোয়া কমিশন বাণিজ্য এখনো অব্যাহত আছে বলে জানা গেছে। আর এসব অনৈতিক অর্থে তিনি ভোগ করছেন বিলাসী জীবন। অন্যদিকে তার এসব কাজে সরকারের অপচয় হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এখনি তাকে থামানো না গেলে সরকারি অর্থের অপচয় রোধ করা মুশকিল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

    জানা যায়, প্রকৌশলী তানজীর সাইফ ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, মন্ত্রী পরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার, আইইবির সাবেক সভাপতি ও দাউদকান্দির এমপি ইঞ্জিনিয়ার সবুর সহ অনেক এমপি মন্ত্রী ও সিনিয়ির আমলাদের আস্থাভাজন। সেই সম্পর্কের প্রভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে তিনি দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছেন। সেই ফ্যাসিবাদ সরকার পতনের এক বছর অতিক্রম করলেও তানজীর সাইফের কমিশন বানিজ্য ও দুর্নীতি অব্যাহত আছে সমানতালে। বরং ক্ষেত্রবিশেষ কমিশনের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

    সংশ্লিষ্টরা জানান, ২ দফায় কাজের মূল্যের উপর ৮ শতাংশ কমিশন দিতে হয় তানজীর সাইফকে। প্রথমে ৫ শতাংশ পওে বিল ছাড়ের সময় আরো ৩ শতাংশ। যে ঠিকাদার এই কমিশন দিতে রাজি হবে সেই কাজ পাবে আর যারা দিতে রাজি হবেনা তারা টেন্ডাওে অংশ নিলেও কাজ পাবে না। আর পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে দফায় দফায় টেন্ডারের শর্ত পরিবর্তণ করা হয়। সম্প্রতি কমিশন বাণিজ্য ঠেকাতে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন (৯৫৮৪/২৫) দায়ের করেছন এক ঠিকাদার। রিটে তানজীরকে ৩ নং বিবাদী করা হয়েছে। ৪ নং বিবাদী করা হয়েছে ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রপার্টি ডেভলাপমেন্ট লিমিটেডকে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাপরিচালককে যথাক্রমে ১ ও ২ নং বিবাদী করা হয়েছে। রিট পিটিশনের শুনানিতে ৪ সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে রুল জারি করেছেন বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী এবং বিচারপতি ফয়েজ আহমেদ এর আদালত।

    কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ ও এইচএমসিএল (জেভি) এর পক্ষে মো. হারুন অর রশিদ এর দায়ের করা রিট পিটিশনে বলা হয়েছে, টেন্ডার প্যাকেজ নং 2/NDR/BANSHBARIA/2024-2025 এর আওতায় বাঁশবারিয়া (সীতাকুণ্ড) ফেরিঘাট ও সংযুক্ত রাস্তার টেন্ডারে (আইডি নং ০৯৪৮৪৩) (Annexure-A) অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে তার অধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে। ৩ নং বিবাদী কর্তৃক প্রকাশিত ও ৪ নং বিবাদীর অনুকূলে প্রদানকৃত টেন্ডার কেন অবৈধ ও আইনগত কার্যকারিতা শূন্য বলে ঘোষণা করা হবে না।

    সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকা অবস্থায় তাদের আর্শীবাদপুষ্ট হয়ে হাজার কোটি টাকার কাজে ঘুষ বাণিজ্য করলেও তার কোন তদন্ত বা বিচার হয়নি। আবার বর্তমান সময়ে এসে সেই অনৈতিক বাণিজ্য অব্যাহত থাকলেও কারো কোন টু শব্দ নেই। তানজীর বর্তমানে সন্দ্বীপে বেড়িবাঁধ প্রকল্পের ৫৬২ কোটি ২১ লাখ টাকার কাজের দ্বায়িত্বে রয়েছে। খাগড়াছড়িতে চেঙ্গী ও মাইনী নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য ড্রেজিং, নদী পুনঃখনন ও চর অপসারণ এবং তীর রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সরকারের ৫৮৬ কোটি টাকার প্রকল্প তার অধিনেই চলমান।

    সুত্র জানয়, তাঁর অধিনে অতীতে বাঁশখালীর কদমরসুল প্রেমাশিয়া সহ বিভিন্ন এলাকায় ৩শ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। ফলে কাজ শেষের এক বছরের মধ্যে ওই বেড়িবাঁধ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়াও কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডে থাকা অবস্থায় সে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার মহেশখালী মাতারবাড়ি, ধলঘাটা, কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরং এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও মেরিন ড্রাইভ রোডে জিও ব্যাগ প্রকল্পের কাজে কয়েক হাজার কোটি টাকার কাজে ব্যাপক দুর্নীতি করেন প্রকৌশলী তানজীর সাইফ।


    এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজীর সাইফ রিট পিটিশনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ইজিপি টেন্ডারের শর্ত পূরণ করতে না পেরে একজন ঠিকাদার রিট করেছেন, আমরা আমাদের জবাব দিয়েছি। কমিশন বাণিজ্যেও বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন অনেকেই ভুল করে আমাকে নিয়ে নানারকমের কথা বলেন, পরে আবার এসে ক্ষমা প্রার্থণা করেন।
    অপর একটি সুত্র জানায়, ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ তুললে, তাদের পরিণতি হতো ভয়াবহ। এমনকি খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তাও তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পেতো না। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি খোলস পাল্টে প্রভাবশালীদের হাত ধরে আগের সকল অপকর্মগুলো ধামা চাপা দিয়ে এখনো সমান তালে চালাচ্ছেন অপকর্ম। তার অনৈতিক ফায়দার ভাগ সরকারের প্রভাবশালী কারো পকেটে যাচ্ছে কি না তা নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।##

    Share on facebook
    Share on twitter
    Share on whatsapp
    Share on linkedin
    Share on telegram
    Share on skype
    Share on pinterest
    Share on email
    Share on print