আজ মঙ্গলবার ║ ১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আজ মঙ্গলবার ║ ১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ║৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ║ ১২ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ:

    সম্পত্তির লোভে বিকৃত মনুষত্ত্ব

    পেট্রোলের আগুনে পরিকল্পিত শিশু হত্যা

    স্বজনদের আতঙ্ক যেন কাটছেনা

    Share on facebook
    Share on whatsapp
    Share on twitter

    ভূমি বিরোধের জেরে শিশু হত্যার মত বর্বরতায় আতঙ্ক বেড়েছে সাধারণ পরিবারের মাঝে। কতটা পাষন্ড ও নির্মমতায় এমন ঘটনা ঘটাতে পারে তা প্রশ্নবিদ্ধ। একজন নিকটাত্মীয়কে কবরস্থানে দাফনকে কেন্দ্র করে পেট্রোলের আগুনে দুই শিশুকে পুড়িয়ে মারার ঘটনাটি মেনে নিতে পারছেনা মা-বাবা ও স্বজনেরা। সামান্য কথা কাটাকাটির জেরে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও ভাবিয়ে তুলেছে। মামলার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গতকাল রাতে র‌্যাব সেভেনের একটি দল নরপিশাচ হত্যাকারী স্বামী-স্ত্রীকে ফেনীর বিরিঞ্চি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে জেলে প্রেরণ করেছে আদালতের মাধ্যমে।
    দুই শিশু হত্যার মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, নিহত শিশুদ্বয়ের পিতা শহিদুল ইসলামের সাথে আসামিদের দীর্ঘদিন যাবৎ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এছাড়াও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। বিরোধের জেরে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টার দিকে শহিদুল ইসলাম এর বসত বাড়ির সামনে ব্যক্তি মালিকানা ও দখলীয় কবরস্থানে দাফনকে কেন্দ্র করেই ঘটনার সূত্রপাত। আসামী আনোয়ারারের চাচাতো ভাইকে দাফনকে কেন্দ্র করে শহিদুল ইসলাম এর সাথে আসামিদের বাকবিতন্ডা হয়। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে আসামিগণ ধারালো অস্ত্র দিয়ে শহিদুল ইসলামকে হত্যা করার জন্য আক্রমণ করলে শহিদুল ইসলাম তখন প্রাণ ভয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। আসামিগণ শহিদুলকে হত্যা করতে না পেরে অতি মাত্রায় ক্ষিপ্ত হয়ে শহিদুল ও তার পরিবারের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করতঃ ভবিষ্যতে রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত অবস্থায় শহিদুল এর বসত ঘরে পেট্রোল দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে পরিবারের সকলকে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
    পরবর্তীতে গত ৩ অক্টেবর রাত ১১টার দিকে শহিদুল তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে নিজ বসত ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টার দিকে আসামিরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুতে থাকে। শহিদুল ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে বসত ঘরের ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং ঘরে দরজা বাহির থেকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে যাহাতে কেউ বের হতে না পারে। আগুনের মধ্যে শহিদুল ও তার স্ত্রী ঘর থেকে বের হতে গিয়ে দরজা খুলতে ব্যর্থ হয়। অপরদিকে পাশের কক্ষে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল মাহিদুল ইসলাম শাহাদাত (১৩) এবং তানজিদুল ইসলাম গোলাপ (০৬)। মূহুর্তের মধ্যে পেট্রোলের আগুনে জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায় হয়ে যায় ১৩ বছরের শিশু মাহিদুল। তাদের উদ্ধারের জন্য শহিদুল ও তার স্ত্রী’র আর্তচিৎকারে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে এসে আহত অবস্থায় শহিদুল ও তার স্ত্রী’কে উদ্ধার করে। অপর কক্ষে বড় পুত্র মাহিদুল ইসলাম শাহাদাত (১৩) ঘটনাস্থলেই আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করে। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ছোট ছেলে তানজিদুল ইসলাম গোলাপ (০৬)’কে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করে। এ চাঞ্চল্যকর ও হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ফেনীসহ সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় নিহত শিশুদ্বয়ের পিতা শাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৩ জন নামীয় এবং ৪/৫ জন’কে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ফেনী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন(নং-১৫, তারিখ-০৫ অক্টোবর ২০২৩ )
    র‌্যাব সেভেন সূত্রে জানা গেছে, ৬ অক্টোবর এজাহারনামীয় ও প্রধান পলাতক আসামী আব্দুল আজিম (৪৫) কে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানাধীন পূর্ব মধুগ্রাম এলাকা থেকে গেস্খফতার করা হয়েছে। সে পশ্চিম মধুগ্রাম এলাকার আবু আহাম্মদের ছেলে। আজিমকে জিজ্ঞাসাবাদে এজাহারনামীয় আরেক আসামী মধ্যম বিরিঞ্চি এলাকার মোহাম্মদ জয়নালের স্ত্রী মায়া বেগম (৪০)কে ফেনী মডেল থানাধীন মধ্যম বিরিঞ্চি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
    র‌্যাব সেভেনের জিজ্ঞাসাবাদে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এবং পূর্ববিরোধের জেরে শহিদুলের ঘরে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন দিয়েছে। সেখানে দুই শিশু সন্তান’কে পুড়িয়ে মারার কথা মনের অকপটে স্বীকার করে। মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে আইন শৃংখলা বাহিনীর নজর এড়াতে আত্মগোপনে ছিল। পলাতক অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে জন্য অভিযান চলমান রয়েছে।
    এ ব্যাপারে র‌্যাব সেভেনের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোঃ নূরুল আবছার বলেন, চাঞ্চল্যকর এই জোড়া হত্যার ঘটনায় অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারকৃতদের তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন টিম অভিযান পরিচালনা করছে। গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামীসহ দুজনকে ফেনী জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

    Share on facebook
    Share on twitter
    Share on whatsapp
    Share on linkedin
    Share on telegram
    Share on skype
    Share on pinterest
    Share on email
    Share on print

    সর্বাধিক পঠিত

    আমাদের ফেসবুক

    আমাদের ইউটিউব