আজ সোমবার ║ ১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আজ সোমবার ║ ১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ║২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ║ ১১ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ:

    পটিয়া পৌরসভা মেয়র ও কাউন্সিলরের দ্বন্দ্ব চরমে

    আড়াই বছরে এক টাকাও দূর্নীতি করিনি: মেয়র

    Share on facebook
    Share on whatsapp
    Share on twitter

    পটিয়া পৌরসভার মেয়র আইয়ুব বাবুল ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোফরান রানার মধ্যে দ্বদ্ব এখন চরমে। পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস, এর পাল্টা জবাব দিচ্ছে একে অপরের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে পৌরসভার সচেতন মহলের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। গত কয়েক দিন ধরে ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোফরান রানা তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে পৌর মেয়র আইয়ুব বাবুলের বিরুদ্ধে স্ট্যাটার্সে দিয়ে পুনরায় আলোচনায় এসেছে। তিনি গত ২০২২ সালেও পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে ফেইজবুকে স্ট্যাাটার্স দিয়ে আলোচনায় আসেন।
    এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) পটিয়া পৌরসভা মেয়র আইয়ুব বাবুল সাংবাদিকদের সাথে মতবিমিয়কালে নানা বিষয়ে অবগত করেন। তবে ওই সময় কোন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন না। তিনি বলেন, পৌরসভা সৃষ্টি হয়েছে ১৯৯০ সালে। আমি ৬ষ্ঠ পরিষদের মেয়র নিবার্চিত হই। আমার পূর্বে পৌরসভায় প্রশাসক, চেয়ারম্যান ও মেয়র পদে অনেকেই দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তারা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের সৃষ্ট ময়লা আবর্জনা গুলো চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের শ্রীমাই ব্রিজের দু’পাশে খালি জায়গায় ফেলে আসছিল। সেইটি পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। দীর্ঘবছর ধরে ৭নং ওয়ার্ডে পৌরসভার বর্জ্য গুলোর সুযোগ দেওয়ার ওয়ার্ডবাসী’র প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়। কিন্তু আমি ৬ষ্ঠ পরিষদ মেয়র নিবার্চিত হওয়ার পর অদৃশ্য কারণে উক্ত স্থানে পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলা নিয়ে পাশ^বর্তী ইউপি চেয়ারম্যানের বাধাঁ সৃষ্টি করে। দুই বছর আগে পৌরসভার আবর্জনা ফেলতে বাধাঁ ও কর্মচারীদের মারধরের ঘটনায় যদি মামলা নেয়া হতো তবে আজকের এ সমস্যার সৃষ্টি হতো না। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তখন মামলা নেয়নি পুলিশ। পরবর্তীতে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ একটি ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণে উদ্যোগ নিয়েছি, তা সম্বব হয়নি। তবে পৌর এলাকার আবর্জনা নিয়ে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তা অচিরেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। পটিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোফরান রানা বয়সের কারণে লাইভে এসে পৌরসভা ও মেয়রের বিষয়ে এসব কথা বলেছেন। বর্জ্য ৯টি ওয়ার্ডে সৃষ্ট হয়। তাই এর অব্যবস্থাপনা হলে এর দায়ও সকলের। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, পৌরসভার আড়াই বছরে আমি এক টাকাও দূর্নীতি করিনি আর দূর্নীতিকে আশ্রয় পশ্রয় দেওয়া হবে না। পরিষদের অতীতে কখনো কোরাম সংকট হয়নি, ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবনা নেই এবং উন্নয়ন বাধাঁগ্রস্ত হবে না। তবে কেউ যদি অন্য কাউকে খুশি করার জন্য সংকট সৃষ্টি করতে চায় তবে আমার কিছুই করার নেই। তবে ষডযন্ত্র করে আমাকে দমানো যাবে না।
    গত ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলর গোফরান রানা তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট দিয়ে মেয়রের বিরুদ্ধে লেখেন, ‘জনগণের প্রতিনিধি হয়ে মেয়র দাপ্তরিক কাজ ফেলে দিনের পর দিন সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে ও তেল জ্বালিয়ে নিজের মানুষদের যুবলীগের জেলা কমিটিতে আনার জন্য রাজধানীতে সময় ব্যয় করছেন। জনগণ কিন্তু সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দাপ্তরিক কাজ স্তিমিত হয়ে আছে। আমরাও জনপ্রতিনিধি হিসেবে সমালোচিত হচ্ছি। ভারপ্রাপ্ত কাউকে মেয়রের দায়িত্ব দিয়ে গেলেই তো হয়।’ এরপর তিনি আরেকটি পোস্টে লেখেন, ‘পটিয়া পৌরসভার মেয়র আমি আপনার প্রতিপক্ষ নই। আপনার নীতির কথা তুলে ধরার ইচ্ছে আমার ছিল না। তবে জনগণকে জানানোর জন্য আপনি বাধ্য করলেন। তাই নিরুপায় হয়ে আমাকে কয়েকটি সত্য তুলে ধরতেই হবে। আপনি পারলে উত্তর দেবেন। আমি আপনার ছোট ভাই এবং আপনার পরিষদের সদস্য। আপনার একগুয়েমি, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার আমি তুলে ধরব। দেখলাম কিছু ফেক আইডি থেকে আমার ধারার কিছু মানুষ ও লিখছে। খুব ভালো লাগল, লিখুন।’ তখন গত ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালে মেয়র বাদী হয়ে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে এ মামলা করেন। পরবর্তীতে একই সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পৌরসভার মাসিক সভায় মেয়র ও কাউন্সিলের এ বিরোধ নিষ্পত্তি করতে আলোচনা হয়। এরপর মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন মেয়র।
    চলতি বছরে গত রবিবার (৫ নভেম্বর) রাত ১১.৪০ মিনিটে একটি ভিডিও আপরোড করে ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোফরান রানা পুনরায় আলোচনায় এসেছেন তিনি। তিনি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে স্ট্যাটাসে লিখেন, রাতের অন্ধকারে দুইপাশে (পটিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বাড়ি’র পিছনে/ ওয়াসার সামনে) ময়লা আবর্জনা ফেলা কিসের আলামত? সৌন্দর্য বর্ধন নাকি পরিবেশ বিনষ্ট, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ সড়কের সৌন্দর্য এভাবে কি নষ্ট হয়ে যাবে? আমার প্রতিবাদের ভাষা নেই! আমি নিন্দা জানাই, ধিক্কার জানাই এম পরিবেশ বিনষ্ট করার জন্য। আরেকটি পোস্টে লিখেন, নির্দেশ দেওয়া সহজ, তবে বাস্তবায়ন খুবই কঠিন: প্রয়োজনে ময়লা আবর্জনা আমার বাড়ির সামনের মাঠে রাখা হউক, তারপর ও জনগন গালি না দিক! সাম্প্রতিক পটিয়া পৌরসভার ময়লা আবর্জনা নিয়ে আমরা বড় বেকায়দায় আছি! পটিয়া পৌরসভার তাই ৯টি ওয়ার্ডের ময়লা গুলো পটিয়ার সবচাইতে সুন্দরতম দৃষ্টিনন্দন, ইন্দ্রপোল বাইপাস সড়কের দুইপাশে ফেলে সৌন্দর্য অনেকাংশে ইতিমধ্যে আমরা অনেকটাই বিনর্ষ্ট করেছি পটিয়া পৌর কতৃপক্ষ! তার জন্য আমি ও অনেকাংশে দায়ী। কারণ আমি ও ৬ষ্ট পরিষদের একজন সদস্য। কোটি কোটি টাকা খরচ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশরতœ শেখ হাসিনা পটিয়ার উন্নয়নের রুপকার, মাননীয় হুইপ আলহাজ্ব সামশুল হক চৌধুরী এম পির মাধ্যমে এ বরাদ্দ দিয়েছেন। যা আজ দৃশ্যমান করেছে পটিয়াকে। আলোকিত করেছে পটিয়া শহরকে। তাই আমি এ বাইপাসের সৌন্দর্য যেন বিনষ্ট না হয়, পরিবেশ যেন দূষণ না হয়, তার জন্য এলাকার মানুষের প্রতিবাদের কারণে আমি বারে বারে পৌর কতৃপক্ষকে অভিহিত করেছি, ফেইসবুকে ময়লার ছবি পোষ্ট করেছি যেন আর ময়লা সেখানে না ফেলে। কারণ এ ময়লার দুর্গন্ধ যেভাবে এলাকায় ছড়াচ্ছে তাতে মানুষের রোগব্যাধী হতে পারে। গতকাল রাতে ও আমি খবর পেয়ে দৌড়ে সেখানে গিয়ে পৌরসভার ডেম্পার থেকে ময়লা আনলোড় করতে দেখে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বাঁধা দিই এবং ফেইসবুকে আমার বক্তব্যের ভিডিও আপলোড় করি। যাতে আমরা সচেতন হই। প্রায় ১৮ হাজার লোক আমার ভিডিওটি দেখেন, প্রায় ১২ শত লোক লাইক দেন, প্রায় ৩০০ জনে ভিডিওটি শেয়ার করেন, প্রায় শত শত লোক পরামর্শ মূলক কমেন্ট করেন। গতকাল আমি প্রতিবাদ করাতে অনেকেই ধন্যবাদও জানান। আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। শুনতে পেলাম পটিয়া পৌরসভার মেয়র মহোদয় প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছেন স্ব স্ব ওয়ার্ডে ময়লা ফেলার জন্য! আমরা কোথায় এ ময়লাগুলো ফেলব তা মেয়র মহোদয় আপনিই বলে দিন? আমরা জনগনের সেবক। জেনেশুনে জনগনের ক্ষতি, পরিবেশের ক্ষতি আমি অন্তত আমি করতে পারব না, প্রয়োজনে স্ব সন্মানে বিদায় নেব। যদি আমার ওয়ার্ডে কোথাও ময়লা ফেলতেই হয়, তবে আমার অনুরোধ ৪ নং ওয়ার্ডের সকল ময়লা যেন আমার বাড়ির সামনেই ফেলা হয়। তাতেই আমি খুশি। কারণ আমি ব্যর্থ হয়েছি সেটাই তাদের জানাতে চাই। কারণ আমরা ময়লা ফেলার নির্ধারিত স্থান নির্ধারণ করতে, ডাম্পিং ষ্টেশন স্থাপন করতে কতটুকু সফল হয়েছি তা জনগন বিবেচনা করবেন। আর আমি ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে প্রতিবাদ করা আমার নৈতিক দায়িত্ব ছিল। সেই জায়গা থেকেই প্রতিবাদ করেছি। তার জন্য আমার যা শাস্তি হয তা আমি মাথাপেতে নিতে প্রস্তুত আছি। কারণ আমি আমার এলাকার মানুষদের পরিবেশের বিপর্যয়, পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা করতে বদ্ধ পরিকর। আমি বঙ্গবন্ধর আদর্শের কর্মী, আমি দেশরত্ন শেখ হাসিনার কর্মী, নেতাই শিক্ষা দিয়েছেন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে।

    Share on facebook
    Share on twitter
    Share on whatsapp
    Share on linkedin
    Share on telegram
    Share on skype
    Share on pinterest
    Share on email
    Share on print

    সর্বাধিক পঠিত

    আমাদের ফেসবুক

    আমাদের ইউটিউব