পটিয়া আল জামেয়া ইসলামিয়া জমিরিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসার অব্যহতি পাওয়া মহাপরিচালক ওবাইদুল্লাহ হামযার বিষয় নিয়ে পটিয়ায় জামেয়া মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ও ওবাইদুল্লাহ হামযার গ্রুপ সহ দুই পক্ষ মারমুখী অবস্থান নিয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) সকাল থেকে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করে। পুলিশী হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে ওবাইদুল্লাহ হামযাকে পুর্নবহালের দাবীতে গতকাল পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
অন্যদিকে পটিয়া জামেয়া মাদ্রাসার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে পটিয়া জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকেরা সকাল ১১টায় এক মানববন্ধন কর্মসূচীর আয়োজন করে। পটিয়া জামেয়া মাদ্রাসা সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে এক মানববন্ধন পরিষদের আহবায়ক মাওলানা আনোয়ার হোসাইন রব্বানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মাওলানা হাফেজ নুরুদ্দীন, মাওলানা আকতারুজ্জামান, মাওলানা নুরুল আলম চৌধুরী, মাওলানা আশেক, মাওলানা আনোয়ারুল আজিম, মাওলানা তারেকুর রহমান। বক্তারা বলেন মাদ্রাসার সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ অবস্থান নিলে তা সহ্য করা হবে না। জীবন দিয়ে লং মার্চ প্রতিহত করা হবে।
দুপুরে পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পটিয়া জামেয়া মাদ্রাসায় মহাপরিচালক মুফতী ওবাইদুল্লাহ হামযার পক্ষে আয়োজিত সমাবেশে নেতৃবৃন্দরা মাদ্রাসায় সন্ত্রাসী হামলা ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী, ইত্তেহাদের নিয়ম অনুযায়ী সুরাইয়া নেজাম বহাল এবং মাদ্রাসার ঘটনা শান্তিপূর্ণ সমাধানের দাবীতে ‘‘পটিয়া অভিমুখে যাত্রা, জামেয়ায় গণ অবস্থান’’ ব্যানার নিয়ে কক্সবাজার, উখিয়া, টেকনাফ, রামু, মহেশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া থেকে অর্ধশত বাস, চেয়ারকোচ, মাইক্রোবাস যোগে শত শত মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এসে সমবেত হয়। তারা মুফতী ওবাইদুল্লাহ হামযার অবৈধ অব্যহতি পত্র প্রত্যাহার করে পটিয়া জামেয়া মাদ্রাসায় মহাপরিচালক পদে পুর্নবহালের দাবীতে স্লোগান দেয়। এক পর্যায়ে গণ অবস্থানের জন্য লং মার্চ করে জামেয়া মাদ্রাসায় প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাঁধা দেয়। এসময় পৌর সদরের ৫ টি পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে সাতকানিয়া- লোহাগাড়া আসনের সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন নদভী আন্দোলনরত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন পটিয়ার এমপি ও জাতীয় সাংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছোট ভাই ফজলুল হক চৌধুরী মহব্বত, মুফতী এনামুল হক, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা সিরজুল ইসলাম, সাতকানিরয়ার ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা হেলাল উদ্দিন, মাওলানা আবছার উদ্দিন চৌধুরী, মাওলানা আজিজুল হক, মাওলনা ফয়জুল্লাহ, মাওলানা আ.ন.ম. আহমদ উল্লাহ, মাওলানা মোহাম্মদ ওসমান, মাওলানা আহছান উল্লাহ, মাওলানা ইমতিয়াজ, মাওলানা ইয়াছিন, মাওলানা এরশাদ উল্লাহ প্রমুখ।
প্রধান অতিথি আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন নদভী এমপি বলেন, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে পটিয়ার সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীকে নিয়ে আল জামেয়া মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ শান্তিপূর্ণ সমস্যার সমাধান না করলে তিনি সাতকানিয়া থেকে ২০ হাজার লোক এনে সমাবেশ করবেন। তিনিও এ মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র। এ ঘটনার তদন্তের জন্য তাকে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তাকেও মাদ্রাসায় ঢুকতে দিচ্ছে না। বর্তমানে মাদ্রাসায় থাকা মাওলানা আবু তাহের নদভী এমপি আবু রেজা নদভীকে মাদ্রাসায় আসার দাওয়াত দেওয়ার এক ঘন্টা পর আবারও না আসার অনুরোধ জানান। এমপি নদভী আরও বলেন, মূলত একটি জঙ্গী গোষ্ঠী ও জামাত-শিবির মাদ্রাসার কিছু শিক্ষকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাই। জামাত-শিবিররা আমাকে কতবার চেষ্ঠা করেছে মারার জন্য কিন্তু মারতে পারে নি। সুতরাং আমি এসব ভয় পাই না। মাদ্রাসার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য যেদিকে যেটা করার দরকার আমি সেটা করে যাবো।
অপরদিকে, মাদ্রাসার মহাপরিচালক ওবায়দুল্লাহ হামযাহ’র দায়ের করা মামলায় জেল হাজতে থাকা হামলার মূল পরিকল্পনাকারী আবদুর রহিমকে মঙ্গলবার সকালে পটিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত জামিন দিলেও পটিয়া থানা হামলার ঘটনায় মামলায় তাকে শোন এরেস্ট দেখানো হয়েছে। আবদুর রহিমের আইনজীবি শাহেদা আবেদ জানান, আদালত আবদুর রহিমসহ ২ জনকে জামিন মঞ্জুর করেছে।
পটিয়া থানার ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, মাদ্রাসার ঘটনায় সকাল থেকে অতিরিক্ত ৩ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে সাজোয়া গানের প্রস্তুতি ছিল। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে ছিল। জামিনে আসা আবদুর রহিমকে শোন এরেস্ট দেখানো হয়েছে।