দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের নৌকার মাঝি কে হচ্ছেন তার নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। কে পাচ্ছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন। মাঝি পরিবর্তন চান দু:সময়ের ত্যাগী ও তূর্ণমূল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামীলীগ সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছর ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগও রয়েছে।
ইতিমধ্যে গত (১৮ নভেম্বর শনিবার) থেকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছেন। গতকাল (২০ নভেম্বর) সোমবার পর্য়ন্ত চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছে ১৫ জন। তৎমধ্যে বেশ কয়েকজন জমা ও দিয়েছেন বলে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আওয়ামীলীগের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটি’র চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ও সাবেক চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা ছাত্রলীগ আহবায়ক সালাউদ্দিন সাকিব। আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারীদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবলীগ যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মুহাম্মদ বদিউল আলম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাছির, সাবেক মহিলা এমপি চেমন আরা তৈয়ব, পটিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, ৬৯ সালের জিরি ইউনিয়ন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ও প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা মেজর জেনারেল অব: আলাউদ্দীন এম এ ওয়াদুদ বীর প্রতীক, দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আবদুর রশিদ, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ও সাবেক চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা ছাত্রলীগ আহবায়ক মোহাম্মদ ফারুক, দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ উপদেষ্টা মন্ডলী’র সদস্য ডক্টর জুলকারনাইন চৌধুরী জীবন, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ অর্থ ও পরিকল্পনা উপ-কমিটির সদস্য তসলিম উদ্দিন রানা, জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য রাশেদ মনোয়ার, বর্তমান সংসদ হুইপ সামশুল হক চৌধুরী’র সহকারি সচিব ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগ অর্থ সম্পাদক হাবিবুল হক চৌধুরী, মহানগর আওয়ামীলীগ নেতা মহিউদ্দিন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চলছে। সেই উন্নয়নকে বেগবান করতে এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় সংসদ নিবার্চনের তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়ে ইনশাল্লাহ জয়ী হব।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বদিউল আলম বলেন, আমি তৃনমূল থেকে গড়ে উঠা দীর্ঘ ৪৪ বছরের ধারাবাহিক রাজনৈতিক কর্মী। আগামী সংসদ নির্বাচন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে পটিয়ায় অপরাজনীতি চলছে। এখানে নেতৃত্ব শুন্যতা বিরাজ করছে। তিনি তৃর্ণমুল থেকে তিলে তিলে গড়ে উঠা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। মানুষের উন্নয়নে জন্য রাজনীতিতে এসেছি। মাঠে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় থেকে দুঃসময়ে দলের হাল ধরেছি। রাজনৈতিক কর্মীদের প্রত্যাশা থাকে সম্মেলন হলে দলীয় পদ আর নির্বাচন আসলে দলীয় মনোনয়ন। আমি যদি নৌকার হকদার ও দাবিদার হই সব বিবেচনায়, দল নিশ্চয়ই, নেত্রী আমাকে নিরাশ করবেন না। মনোনয়ন পেলে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করতে এবং পটিয়ার হারানো গৌরব, ঐতিহ্য ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনবো ইনশাল্লাহ।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসির বলেন, ভোটারদের মন জয় করে ও কেন্দ্র ঘোষিত রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ ও গনসংযোগে মাঠে সরব রয়েছি। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত। মনোনয়ন পেলে ‘গড়বো পটিয়া সবাই মিলিয়া’ এই শ্লোগান নিয়ে বীর প্রসবিনী পটিয়ার গৌরব ফিরিয়ে এনে আলোকিত স্মার্ট পটিয়ার প্রত্যাশা করছি।
পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশীদ বলেন, পর পর দু’বার আমি পটিয়া পৌরসভার মেয়র পদে প্রতিদ্ধন্ধী করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে প্রথম শ্রেনীর পৌর শহর উন্নীত করে পৌর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। দলীয় সভা-সমাবেশে ও গণসংযোগে সরকারের কর্মকান্ড ভোটারদের মাঝে তুলে ধরেছি। পটিয়া উপজেলা ও পৌরসভায় আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। দলীয় মনোনয়ন চাইব তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করব।
দক্ষিন জেলা আওয়ামীলীগ উপদেষ্টা ডক্টর জুলকারনাইন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আ’লীগের রাজনীতির কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে উন্নয়নে জন্য রাজনৈতিতে এসেছি। করোনাকালীনসহ পটিয়া উপজেলা ও পৌরসভায় অসহায় মানুষের জন্য মানবিক সহায়তাসহ শিক্ষা, চিকিৎসা এবং আর্তসামাজিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করেছি। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আগামী নির্বাচনে এ আসনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবো ইনশাল্লাহ।
রাওয়া সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) আলাউদ্দিন এমএ ওয়াদুদ (বীর প্রতীক) বলেন, বিগত ২০০৮ সালের নিবার্চনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে সর্বদা দৃড়ভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে “রুপকল্প ভিশন ২০৪১” এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য সর্বদা বাংলাদেশ মুজিব সৈনিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। দলীয় মনোনয়ন চাইব তবে দলীয় সভানেত্রী যাতে মনোনয়ন দেবে তার সাথে কাজ করব।
উল্লেখ্য যে, পটিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নসহ একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। ১৯৭৩ সালে আ’লীগ থেকে নির্বাচিত হন নুরুল ইসলাম চৌধুরী, ১৯৭৯ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন নজরুল ইসলাম, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হন চৌধুরী হারুনুর রশিদ, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও ১৯৯১ সালে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এস.এম. ইউসুফ। তিনি বিএনপির প্রয়াত শাহজাহান মন্টুর কাছে পরাজিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নৌকার প্রার্থী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রয়াত মোছলিম উদ্দিন আহমদ দু”বার তিনি বিএনপির সাবেক সংসদ গাজী শাহজাহান জুয়েলের কাছে পরাজিত হন। ২০০৮,২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিন বার নৌকা প্রতীকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী নিবার্চিত হন। এ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আরো ২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন চলমান রয়েছে।