সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের(চবি) উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ এবং নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন চবি শিক্ষক সমিতি। তবে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের ৩ সদস্য। তারা হলেন, অধ্যাপক ড. রকিবা নবী , অধ্যাপক ড. দানেশ মিয়া,অধ্যাপক ড. ফরিদুল আলম।
বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করে বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, গত কিছুদিন ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ব্যানারে মাননীয় উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবীতে যে আন্দোলন কর্মসূচী পালিত হয়ে আসছিল, তা দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এই আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে, এমন দাবী করা হলেও অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে শিক্ষক সমিতির একাংশ তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে পুঁজি করে এধরণের কর্মসূচী পালন করে আসছেন। এমনকি এধরণের কর্মসূচীর বিষয়ে গত কয়েকমাস আগে সমিতি কর্তৃক আহুত সাধারণ সভার সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় আলোচনা না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশকে বিঘ্নিত করে হীন কিছু ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এধরণের কর্মসূচী পালিত হয়ে আসছে বলে আমরা মনে করি।
এবিষয়ে সমিতি কর্তৃক আজ ৯ জানুয়ারি নির্বাহী কমিটির এক জরুরি সভা আহবান করা হয়, যেখানে শীতকালীন ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবী চলমান রাখা এবং রেজিস্ট্রার কর্তৃক গত ১৭ ডিসেম্বর বাংলা এবং আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড চলাকালীন বোর্ড বাতিলের দাবিতে কিছু শিক্ষকের উপাচার্যের কার্যালয়ে সমবেত হওয়া এবং পরবর্তীতে এটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কর্তৃক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি – এ দু’টি বিষয় আলোচ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সভার আগের দিন সন্ধ্যায় এবিষয়ে নোটিশ প্রেরিত হয়। এখানে উল্লেখ করতে হয় যে জরুরি সভায় একের অধিক বিষয়ে আলোচনা করার কোন বিধান নেই, সেক্ষেত্রে কমপক্ষ্যে ৩ দিনের সময় দিয়ে নোটিশ দেয়ার বিধান রয়েছে। আমরা এবিষয়ে সভার শুরুতে প্রতিবাদ করলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক দুটি বিষয় একটির সাথে আরেকটি সম্পর্কিত মন্তব্য করে বিষয় ‘ক’ এবং বিষয় ‘খ’ বলে মন্তব্য করলে আমরা বিনয়ের সাথে এ দুটি বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা এবং যেকোন একটি বিষয়ের উপর আলোচনার অনুরোধ করি। দুঃখের বিষয়, আমাদের ৩ জনের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে তারা তাদের আলোচনা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিলে আমরা কেবল প্রথম বিষয়ে আলোচনার জন্য সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দ্বিতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনায় আমাদের অনুপস্থিতির কথা জানিয়ে দিই।
প্রথম বিষয় নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে যখন মাননীয় উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে তাদের আন্দোলন কর্মসূচীকে আবারও চলমান রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল এবং এটি সাধারণ শিক্ষকদের দাবী- এমনটা দাবী করা হচ্ছিল, আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনে সাধারণ একটি সভা করে বিষয়টি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করলে আমাদের দাবীকে আমলে নেয়া হয়নি। এধরণের দাবীর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সর্বস্তরে একধরণের নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে চ্যান্সেলর কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবী মূলত সরকারের প্রতি আস্থাহীনতাকেই প্রমাণ করে, জানালেও বিষয়টি অগ্রাহ্য হয়। উপরন্তু শিক্ষক সমিতির একাংশের দাবী এবং কর্মসূচী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য কর্তৃক একাধিকবার সমিতিকে চায়ের নিমন্ত্রণ করলেও সেটি আমলে নেয়া হয়নি। আমরা বারবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি যে সমস্যা সমাধানে আলোচনার কোন বিকল্প নেই।
আমাদের প্রতিটি পরামর্শ সমিতির একাংশের সংখ্যাগরিষ্ঠতার নামে প্রত্যাখ্যাত হলে বাধ্য হয়ে আমরা নির্বাহী সভা থেকে ওয়াকআউট করি।
আমরা মনে করি আলোচনার পথটি রুদ্ধ করে সমিতির কতিপয় সদস্যের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থির করার প্রয়াস কোনভাবেই শুভবুদ্ধির পরিচায়ক হতে পারেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকবৃন্দ এবং সচেতন মানুষকে বিভ্রান্ত করার এধরণের প্রয়াস প্রকারান্তরে বিশবিদ্যালয়কে অনেক পিছিয়ে দেবে। আন্দোলনের অনেক পথ থাকতে পথে দাঁড়িয়ে উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য সম্পর্কে কটুক্তি করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাজ হতে পারেনা। শিক্ষক সমিতির মূল কাজ যেখানে শিক্ষকদের স্বার্থ এবং সম্মান সমুন্নত রাখা, এক্ষেত্রে শিক্ষকদের সম্পর্কে জাতির কাছে কোন ধরণের নেতিবাচক ধারণা দেয়া থেকে বিরত থাকাটাই সঙ্গত বলে আমরা মনে করি।