চট্টগ্রাম-১৩ (কর্ণফুলী-আনোয়ারা) আসনে প্রচার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নৌকার মনোনীত প্রার্থী বর্তমান ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী’র মনোনয়ন পাওয়ায় দুই উপজেলার নেতাকর্মীরা খুব উজ্জীবিত।
আওয়ামী লীগ থেকে টানা তিন বার নির্বাচিত সাইফুজ্জামান চৌধুরী ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থানে আছেন। কর্ণফুলী-আনোয়ারার লোকজন জানান, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ ও তাঁর অঙ্গসংগঠনের নেতারা বেশ সক্রিয়।
দুই উপজেলায় তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। নির্বাচনী এলাকার জনসাধারণের কাছে তিনি সৎ-পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ও ক্লিন ইমেজের মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকায় তিনি প্রতি সপ্তাহে জনসাধারণ ও নেতাকর্মীদের সময় দেন, এলাকার মানুষের খোঁজ-খবর নেন। দলের ভেতরে বাহিরে ও অন্যান্য দলেরও কাউকে তিনি অন্যায় করলে প্রশ্রয় দেননি বলে প্রচার রয়েছে।
আসনটি স্থানীয়ভাবে ভিআইপি আসন হিসেবেও পরিচিত। কেনোনা, এ আসনের বিজয়ী প্রার্থী প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। পাশাপাশি এ আসন থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন-চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহাজাদা মহিউদ্দিন, আনোয়ারা বারশত ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা সমীরণ নাথ ও আরেক আওয়ামী লীগ নেতা মুহাম্মদ বদিউল আলম। দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করায় তাঁরা নীরব।
এছাড়াও চট্টগ্রাম -১৩ আসনে নৌকার প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ছাড়া বিভিন্ন দল থেকে মনোনয়ন নিয়েছেন আরও ৫ জন। তাঁরা হলেন-
তৃণমূল বিএনপি (সোনালি আঁশ) থেকে মকবুল আহম্মদ চৌধুরী সাদাদ, জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) থেকে আবদুর রব চৌধুরী টিপু, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি) থেকে মাস্টার মুহাম্মদ আবুল হোসেন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার) থেকে সৈয়দ মুহাম্মদ হামেদ হোসাইন এছাড়াও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা) থেকে মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন মনোনয়ন নিয়েছেন।
তবে মাঠে-ময়দানে নির্বাচনী তৎপরতা বেশ জোরালো ভাবেই দেখা যাচ্ছে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৃণমূলে তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকিয়ে আছেন কেন্দ্রের দিকে। বিএনপি যদি ভোটে যায়। তবে কেন্দ্র থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তারপক্ষেই নেতাকর্মীরা কাজ করবেন-এমন কথাও বলেছেন কেউ কেউ।
সেক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচনে গেলে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চাইবেন। তাতে কোন সন্দেহ নেই। যদিও এ দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মাঝেও প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্যে বিভেদ-বিরোধ লেগেই আছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা এটাও বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাঁরা আবারো আসনটি ফিরে পাবেন।
আওয়ামী লীগের বিপরীতে এই আসনটিতে বিএনপি একাধিকবার জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করলেও বর্তমানে দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা একেবারে নড়বড়ে। যার চিত্র উঠে এসেছে বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি উপজেলায় বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম তীব্র হলেও আনোয়ারায় তেমন লক্ষ্য করা যায়নি।
এছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাভোগ ও চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে আনোয়ারা-কর্ণফুলীতে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে দেখা যায়নি কোনো সিনিয়র নেতাকে। তবে বিএনপির রাজনীতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দলটির ক্ষমতাসীন অবস্থা থেকে একক নেতৃত্বে ছিলেন এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সরোয়ার জামান নিজাম।
২০০৮ সালের নির্বাচনে হারার পর তিনি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। গত ১৪ বছর ধরে তিনি এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন। চট্টগ্রামে বিএনপির কোনো আন্দোলন সংগ্রামেও নেই তার উপস্থিতি। এই সুযোগে বিএনপির বাকি নেতারা তৎপর হয়ে উঠেছেন। তাঁরা নানা কৌশলে মাঠে রয়েছেন।
এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে নমিনেশন সংগ্রহ করে বিএনপির নেতৃত্বে নতুন মুখ হিসেবে দেখা যায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ি মুস্তাফিজুর রহমানকে। তিনি উপজেলা কিংবা জেলায় আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে সক্রিয় ছিলেন। সব মিলিয়ে বিএনপির কোন প্রার্থী ভোটে না আসলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরবে হয়তো আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কিনা জানতে চাইলে বিএনপি নেতা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে দলের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছি। দলের সব কর্মসূচি নেতাকর্মীদের নিয়ে পালন করেছি। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের হাইকমান্ড থেকে আমাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। এবার যেহেতু আমার দল এখনো নির্বাচনে যাচ্ছে না, সেক্ষেত্রে আমার মনোনয়ন নেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। দল নির্বাচনে গেলে অবশ্যই নমিনেশন নেব (ইনশাআল্লাহ)।আপাতত আন্দোলন সংগ্রামে আছি।’
তৃণমূল বিএনপি (সোনালি আঁশ) এর প্রার্থী মকবুল আহম্মদ চৌধুরী সাদাদ বলেন, ‘দল আমাকে এ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। আমি আশাবাদী সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ আমাকে বিজয়ী করবেন।’
একই ভাবে জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) এর প্রার্থী আবদুর রব চৌধুরী টিপু, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি) এর প্রার্থী মাস্টার মুহাম্মদ আবুল হোসেন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার) এর সৈয়দ মুহাম্মদ হামেদ হোসাইন ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (একতারা) মোহাম্মদ মঈন উদ্দীনও একই আশা ব্যক্ত করেন।
আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এমএ মান্নান চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ভূমিমন্ত্রী মহোদয় সারা বাংলাদেশে একজন পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব। দক্ষিণ চট্টগ্রামে বাবু পরিবারের যোগ্য অনুসারী হিসেবে তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে এই অঞ্চলের অদ্বিতীয় একজন অভিভাবক। সুতরাং এ আসনে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এর কোনো বিকল্প নেই। দল হিসেবে আমরা শতভাগ প্রস্তুত। আমাদের যাবতীয় সাংগঠনিক কাজ সম্পন্ন। আমাদের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। আগামী নির্বাচনে আমাদের জয় সুনিশ্চিত। একই কথা জানালেন কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোলায়মান।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম ১৩ আসনে (কর্ণফুলী-আনোয়ারা) ১১৮ টি ভোটকেন্দ্র ও ৮৩৩ টি ভোট কক্ষ, পুরুষ ভোটার ১৮৭৯০৩, মহিলা ১৬৭১২৯, মোট ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩২ জন।