চট্টগ্রাম শুধুমাত্র বন্দর নগরী নয়, বানিজ্যিক রাজধানী খ্যাত ও জাতীয় অর্থনীতি কেন্দ্র বিন্দুও বটে। চট্টগ্রাম নগরে এখন গ্যাসের হাহাকার চলছে। গৃহিণীর চুলা থেকে শুরু করে সিএনজি ফিলিং স্টেশন, শিল্প- কারখানা কোথাও গ্যাস নেই। এ সংকট চলছে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরীর লাখো গ্রাহক। এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সংকটের কারণে নগরীর আন্দরকিল্লা, জামালখান, লাভলেইন, নন্দনকানন, আগ্রাবাদ, চকবাজার, বহদ্দারহাট, চকবাজার, দেওয়ানবাজার জুড়ে কোথাও চুলা জ্বলছে না সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। এতে বাসাবাড়ীর সকল বয়সের শ্রেণী পেশার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে হোটেল রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে খেলেও সবার পক্ষে তা কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না, ফলে অবস্থা আরো ভয়াবহতায় রূপ নেয়ার আগেই সরবরাহ দ্রুত বাড়ানো দরকার। শুধু রান্নাঘর নয়, এ সংকট সিএনজি চালিত গাড়ি ও শিল্প কলকারখানাতেও পড়ছে। নগরীর ফিলিং স্টেশনগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
চট্টগ্রামে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা গড়ে ৪০-৪৫ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ হয় ২৮ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে ১০ কোটি ঘনফুটের বেশি ব্যবহার হয় চট্টগ্রামের দুটি সার কারখানা ও একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। বাকি গ্যাস পায় শিল্প ও আবাসিক খাত। এ সংকটের মধ্যেই আবার সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে দুই-তিন কোটি ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একদিকে সরবরাহও কম আবার সরবরাহকৃত গ্যাসের চাপও (প্রেসার) কম। এতে বিপাকে পড়েছেন আবাসিক খাতের লক্ষ লক্ষ গ্রাহক, শিল্পকারখানা, সিএনজি স্টেশন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাইপ লাইনে গ্যাসের চাপ না থাকায় ঘরে চুলা জ্বলে না অনেক এলাকায়। কিন্তু গ্যাস সংকটের কারনে শুধুমাত্র শিল্প কলকারখানা নয়, বাসাবাড়ী ও জীবনযাত্রাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সংকট অতি জনগুরুত্বপুর্ন বিবেচনায় সমস্যাটি শুধুমাত্র গৃহিণীদের নয়, বস্তুত সামগ্রিক জাতীয় অর্থনীতিই পড়েছে সংকটের মুখে। জাতীয় অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম যে কোনো বিবেচনায় গ্যাস সরবরাহে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। তাই বর্তমানে জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহকৃত গ্যাসের পরিমান বৃদ্দির পাশপাশি গ্যাসের চাপও (প্রেসার) বাড়ানো, উৎপাদন, সংযোগ, সুষম বন্টন ও বিতরণ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার মাধ্যমে চট্টগ্রামে গ্যাসের সংকট দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষনকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নেতৃবৃন্দ। গ্যাস সংকট সমাধানে যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহন করে দ্রুত চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করে দ্রুত জনজীবনে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রিড থেকে পর্যাপ্ত পরিমান গ্যাস সরবরাহ, এলপিজিকে আরো স্বল্পমূল্য, বিতরণ ব্যবস্থা সহজলভ্য ও জনবান্ধব করার দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে সংকটকালীন সময়ে বিকল্প ব্যবস্থপনায় গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা না থাকায় চট্টগ্রামে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) চট্টগ্রামে তীব্র সংকটের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিতে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, সহ-সভাপতি সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন চট্টগ্রামে গ্যাস বেশ কয়েক বছর ধরে গ্যাস সংকটের কারণে নগরীর বেশ কিছু আবাসিক এলাকায় বেশির ভাগ সময় চুলা জ্বলছে না। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত তিন-চারঘণ্টা গ্যাস থাকছে। তবে সূর্য ওঠার আগেই তা চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় নগরজীবনে কেবলই গ্যাসের চুলার ওপর যারা নিভর্রশীল, তারা পড়েছেন তীব্র সংকটে। তবে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) বেশ কয়েকবার চট্টগ্রামে বিরাজমান গ্যাস সংকট নিরসন করার আশ্বাস দিলেও এর দৃশ্যমান অগ্রগতি হয় নি। অধিকন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উৎসবে সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবি টুকু সেভাবে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতেও আসেনি। যদিও সব প্রার্থীই মানুষের সমস্যা সমাধানে ও সংকটে পাশে থাকার কথা বলছেন?
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪১০ কোটি ঘনফুট। যদিও স্বাভাবিক সময়ে সরবরাহ থাকে প্রায় ৩০০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে দিনে গ্যাস সরবরাহ হয় ৮৫ কোটি ঘনফুট। এ দুই টার্মিনালের একটি বন্ধ রয়েছে। ফলে সারা দেশে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে ২৫৫ কোটি ঘনফুট। সব মিলিয়ে দেশে এখন গ্যাসের সরবরাহ হচ্ছে মোট চাহিদার ৬২ শতাংশ। গ্যাসের সংকটের কারণে বেড়ে গেছে গ্যাস সিলিন্ডারের দামও। এ অবস্থায় চট্টগ্রামে বেশকিছু এলাকায় পরিবেশ বিনাশী লাকড়িই, স্টোভ, বিদ্যুত চালিত ইন্ডাকশন কুকার এখন রান্নাবান্নার প্রধান ভরসা হয়ে উঠেছে। শিল্প-কারখানায়ও গ্যাসের চাহিদার এক-চতুর্থাংশও পাওয়া যাচ্ছে না।