কর্ণফুলী নদীর উপর কালুরঘাট সেতু দ্রুত নির্মাণের দাবিতে রেল সচিবের বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ফোরামের পক্ষে মহাসচিব মো. কামাল উদ্দিন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ নাজমুল ইসলামের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি প্রদান করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য নুর মোহাম্মদ নুর আলী, একেএম ওসমান গনি,কামরুল ইসলাম , মোহাম্মদ মুনচুর আলম, মাসুদ খাঁন, তসলিম খাঁ, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন খন্দকার, সাংবাদিক আশিফ,মোহাম্মদ আকতার হোসেন,পংকজ রাহুল, ইব্রাহিম, মিলনসহ নাগরিক ফোরামের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় যে, কালুরঘাট সেতুটি ১৯৩০ সালে নির্মিত এবং বর্তমানে এটি অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, যা স্থানীয় জনসাধারণ এবং যাত্রীদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ চালু থাকার পরেও কালুরঘাটে একটি আধুনিক সেতুর অভাবে যথাযথ রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারছে না। নাগরিক ফোরামের দাবি, পুরোনো সেতুটি প্রতিস্থাপন করে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে নতুন সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করতে হবে এবং ২০২৮ সালের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সেতু নির্মাণে কালক্ষেপণের প্রভাব: স্মারকলিপিতে আরও বলা হয় যে, কালুরঘাট সেতু নির্মাণের প্রকল্পটি অনেক বছর ধরে ঝুলে আছে এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির কারণে এই প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে গেছে। সেতুটি দ্রুত নির্মাণ না হলে এই অঞ্চলের রেল যোগাযোগ এবং সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে। বিশেষ করে, কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হওয়ায় এর ব্যয়ও বেড়ে গেছে, যা চট্টগ্রামবাসীর জন্য দুঃখজনক।
স্মারকলিপিতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতার প্রস্তাব: নাগরিক ফোরামের মহাসচিব মো. কামাল উদ্দিন বলেন, কালুরঘাট সেতুর কাজ দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার জন্য সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। দেশের বৃহত্তম পদ্মা সেতু মাত্র ৮ বছরে নির্মাণ করা সম্ভব হলে, কালুরঘাট সেতুর মতো তুলনামূলক ছোট প্রকল্পের কাজও যথাসময়ে শেষ করা সম্ভব। এছাড়া, এই সেতুর মাধ্যমে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের মধ্যে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা আরও সহজ হবে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকারের প্রতি চূড়ান্ত আহ্বান: স্মারকলিপিতে সরকারের প্রতি চূড়ান্ত আহ্বান জানানো হয়, কালুরঘাট সেতুর প্রকল্পটি দ্রুত একনেকের মাধ্যমে অনুমোদন করে নির্মাণ কাজ শুরু করতে হবে। স্মারকলিপিতে বলা হয়, চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের এই ন্যায্য দাবিটি পূরণ করতে হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সরাসরি হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।রেলওয়ে জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম
স্মারকলিপি গ্রহণকালে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের স্মারক লিপি দেওয়ার উদ্যোগকো স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন- সরকার কালুরঘাট সেতু নির্মাণের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে।কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়নে সরকার যথেষ্ট আন্তরিক, বিশেষ করে আমাদের সচিব মহোদয় ইতিমধ্যে কালুরঘাট সেতু এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন, তিনি সমস্যা সমাধানের জন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করবেন, নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা সরকারের এমন পদক্ষেপকে স্বাগত জানাবে এবং এর দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চায়। ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন এর নেতৃত্বে নাগরিক ফোরামের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল হচ্ছে কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়নে বিগত সরকারের সিদ্ধান্ত, চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম দীর্ঘদিন ধরে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে এবং সেতু না হওয়া পর্যন্ত সোচ্চার থাকবে, তারা চট্টগ্রামবাসীর জীবনমান উন্নয়ন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের লক্ষ্যে এই আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। সেতুটি নির্মাণ হলে চট্টগ্রামের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষও যেমন উপকৃত হবে, তেমনি কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পও নতুন মাত্রা পাবে।