সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০জন সংসদ সদস্যদের মধ্যে ১৯৯জনই ব্যবসায়ী। মন্ত্রী পরিষদ, সিটিকরপোরেশন এমনি কি রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যেও ব্যবসায়ীরাই এখন নীতি নির্ধারন করেন। সেকারনে ব্যবসায়ীদের বিপক্ষে কোন কথা আসলেই মন্ত্রী, এমপি, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে সরকারের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বে নিয়োজিতদের কণ্ঠে শোনা যায় ব্যবসায়ীরা লোকসান দিচ্ছে। অথচ সামান্য ডিমে কিছু ব্যবসায়ী প্রতিদিন ৪ টাকা করে অতিরিক্ত মুনাফা করে প্রতিদিন ১৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও কারও কোন বক্তব্য নেই। এভাবেই চাল, ডাল, চিনি, সয়াবিন তেলে প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও রমজান উপলক্ষে সরকার ৪টি পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোয় কিছু ব্যবসায়ী বলে উঠলেন তাদের লোকসান হচ্ছে। আর তাঁরা এতদিন মানুষের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত নিয়ে মানুষকে ফতুর করে দিচ্ছেন, সে বিষয়ে তাদের কোন উচ্চবাচ্য নেই। তাই ক্যাবকে সাধারন মানুষের কন্ঠস্বর হয়ে সাধারণ জনগনের ভোগান্তি, হয়রানি ও মনোবেদনার কথা সরকারের নজরে আনতে আরও শক্তিশালি করতে এবং ভোক্তাদেরকে সংগঠতি করতে উদ্যোগী হতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে সম্ভাবনার কথা, স্বপ্নের সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখাতে না পারলে বিপুল সংখ্যক মেধাবী তরুন বিদেশ মুখী হয়ে যাবে।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগের জেলা কমিটির নেতাদের বিভাগীয় সম্মেলনে বিভিন্ন বক্তাগন উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে ও ক্যাব বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জমান, বক্তব্য রাখেন বীরমুক্তিযোদ্ধা শিক্ষাবিদ ডঃ প্রফেসর ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও ক্যাব মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি আবিদা আজাদ, বান্দারবান জেলা কমিটির সভাপতি সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক এস এম শাহীন, লক্ষীপুর জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক পারভীন হালিম, খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক প্রদীপ চৌধুরী, ফেনী জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম নান্টু, কুমিল্লা জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক কাজী মাসুদুল আলম, ন্যাপ কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাস গুপ্ত, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব মহানগরের যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, ক্যাব সদরঘাটের শাহীন চৌধুরী, ক্যাব জামালখানের সালাহউদ্দীন, ক্যাব পাহাড়তলীর হারুন গফুর ভুইয়া, মিরেরশ্বরাই উপজেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক শাহাদত হোসেন, রাউজান উপজেলা কমিটির সাংবাদিক মোজাফ্ফর হোসেন, চন্দনাইশ উপজেলা কমিটির সভাপতি নুরুল হক চৌধুরী, হাটহাজারী উপজেলা কমিটির লায়লা ইয়াছমিন, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি চৌধুরী কে এন এম রিয়াদ, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমান, সদস্য রাসেল উদ্দীন, এমদাদুল ইসলাম, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির খাইরুল ইসলাম প্রমুখ। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক ফয়েজউল্যাহ, জেলা সহকারী পরিচালক নাসরীন আকতার এ উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জমান বলেন, ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে ক্যাবকে জাতির প্রত্যাশা পুরণে আরও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যে কোন নাগরিক ভোগান্তি ও ভোক্তা অধিকার লংগন হলেই ভোক্তাদের পাশে দাড়ানো ও তাদের পক্ষে জোরালো কর্মসুচি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তরুনদের মাঝে স্বপ্ন দেখাতে হবে। যেখানে মানুষের ভোক্তা অধিকার লংগনহনিত ঘটনার প্রতিকার দ্রæত হবে। দেশে ভোক্তাদের মাঝে আরও সচেতনতা বাড়াতে না পারলে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মাঝে বৈষম্য কমানো যাবে না। আর সে কাজে ক্যাবকেই দেশের সর্বত্র জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে। চট্টগ্রাম বিভাগে ক্যাব কর্মকান্ড জোরদার আছে, তাকে আরও তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং একই সাথে দেশের সর্বত্র তা সম্প্রসারণ করতে হবে।
জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ মাঠ পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার কার্যক্রম পরিচালনায় নানা সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন। বিভাগের অনেক জেলায় জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা নাই। যেখানে জেলায় একজন কর্মকর্তা দিয়ে সামাল দেয়া কঠিন, সেখানে একজন কর্মকর্তা দুই জেলার দায়িত্বপালন করতে হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে লোকবল দেয়া না হলে ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা ঠেকানো যাবে না। একই সাথে তৃণমুল পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার শিক্ষা ও সচেতনতা কার্যক্রম বাড়ানো না হলে পুরো দেশ ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে পৃষ্ঠ হয়ে যাবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যাবকে শক্তিশালী করতে সরকারের পৃষ্ঠাপোষকতা বাড়াতে হবে। কারন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি সরকারের নানা সুবিধা ও প্রণোদনা পেয়ে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে, সেখানে ক্যাব এখনও “নিজের খেয়ে বনের মোষ আর কত কাল তাড়াবে”? সম্মেলনে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার প্রায় ৭০ জন ক্যাব নেতা/প্রতিনিধি অংশগ্রহন করেন।