আজ মঙ্গলবার ║ ১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আজ মঙ্গলবার ║ ১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ║৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ║ ১২ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ:

    আগামী ২০৪১ সাল হবে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ

    Share on facebook
    Share on whatsapp
    Share on twitter

    জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ বর্তমান সময়ে বহুল আলোচিত বিষয় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এর মধ্যে কী আছে এবং কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। গত ৭ এপ্রিল, ২০২২ তারিখে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে গঠিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ এর তৃতীয় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বপ্রথম ঘোষণা করেন ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় বাস্তবায়ন করা হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের সভার সিদ্ধান্তের প্রায় আট মাস পর গত ১২ ডিসেম্বর, ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২ এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিলেন ‘৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে জ্ঞান-ভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। আমরা আগামী ‘৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। আর সেই সঙ্গে বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। সেই সাথে তিনি স্পষ্টতই জানিয়ে দিলেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এর চারটি স্তম্ভ স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট ইকোনমি এবং, স্মার্ট সোসাইটি। আগামীর বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে প্রতিটি জনশক্তি স্মার্ট হবে, প্রতিটি কাজ অনলাইনে করতে শিখবে, ইকোনমি হবে ই-ইকোনমি যাতে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল ডিভাইসে করতে হবে। আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মযোগ্যতা’ সব কিছুই ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে হবে। ই-এডুকেশন, ই-হেলথ, ই-কৃষিসহ সব কিছুতেই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। আগামী ‘৪১ সাল নাগাদ আমরা তা করতে সক্ষম হব এবং সেটা মাথায় রেখেই কাজ চলছে।
    প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের সিদ্ধান্তের পর ‘৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে সরকারি দপ্তর। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের জন্য গত ১৬ আগস্ট ২০২২ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হতে গঠিত হয়েছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’।
    স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ এর নয়টি কার্যপরিধিও সুস্পষ্ট করা হয়েছে। অগ্রসরমান তথ্যপ্রযুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা প্রদান। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রম স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তরের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে দিক নির্দেশনা প্রদান। স্মার্ট ও সর্বত্র বিরাজমান সরকার গড়ে তোলার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক ও বৈজ্ঞানিক পরিমন্ডলে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিধি-বিধান প্রণয়নে দিক নির্দেশনা প্রদান। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান। এজেন্সি ফর নলেজ অন এরানোটিক্যাল অ্যান্ড স্পেস হরাইজন (আকাশ) প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান। ব্লেন্ডেড এডুকেশন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং ফাইভজি সেবা চালু পরবর্তী সময়ে ব্যান্ডউইথের চাহিদা বিবেচনায় চতুর্থ সাবমেরিন ক্যাবলে সংযোগের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান; ৭. রপ্তানি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মেড ইন বাংলাদেশ পলিসি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সময়াবদ্ধ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে দিক নির্দেশনা প্রদান। আর্থিক খাতের ডিজিটালাইজেশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান এবং স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ বাস্তবায়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে দিক নির্দেশনা প্রদান।
    ইতিমধ্যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর বা সংস্থা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করেছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ গ্রাম, শহর, অফিস সবই স্মার্ট হবে । স্মার্ট সিটি, স্মার্ট ভিলেজ এবং স্মার্ট অফিস ধারনাকে বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে এটুআই প্রকল্প। ইতিমধ্যে, এটুআই প্রকল্পের পক্ষ থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অংশীজেনর সহায়তায় ‘স্মার্ট ভিলেজ’ কনসেপ্টের পাইলটিং করা হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ ও নাটোর জেলার সিংড়ায় উপজেলায়। একই সাথে ‘স্মার্ট সিটি’ পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন শুরু করা হয়েছে বুয়েটে, ‘স্মার্ট অফিস’ ধারণায় যেখানে সকল নাগরিক সেবা পাবে অনলাইনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে গাজীপুর জেলা এবং বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায়। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যপূরণে যথার্থ জ্ঞান, দক্ষতা এবং যোগ্যতাসম্পন্ন সিভিল সার্ভিস গড়ে তুলতে এটুআই প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে ‘সিভিল সার্ভিস ২০৪১: ডিজিটাল লিডারশীপ জার্নি’। স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ বিনির্মাণের লক্ষ্যে একটি সময়োপযোগী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ‘জাতীয় ব্লেন্ডেড শিক্ষা ও দক্ষতা বিষয়ক মহাপরিকল্পনা’-এর খসড়া প্রণয়নে ব্লেন্ডেড শিক্ষা বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্স-কে কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে এটুআই । ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এটুআই-কর্তৃক উদ্ভাবিত মাল্টিমিডিয়া টকিং বই প্রণয়ন ও এর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রচলন করা হবে। ‘৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে গড়ে তোলার প্রকল্পসহ মোট ৪০টি মেগাপ্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে এই আইসিটি মাস্টার প্লানে। এসব কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম লক্ষ্য ‘৪১ সাল নাগাদ জাতীয় অর্থনীতিতে আইসিটি খাতের অবদান অন্তত ২০ শতাংশ নিশ্চিত করা। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও স্মার্ট বাংলাদেশ বান্ধব পরিকল্পনা, নীতি ও কৌশল গ্রহণ করছেন এই আইসিটি মাস্টার প্ল্যান’ ৪১ এ এই পরিকল্পনা ও নীতি-কৌশলে ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্যোগ গুলোকে স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বিত করা হচ্ছে।

    প্রযুক্তিতে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রবেশগম্যতা ও অভিযোজন, যা স্মার্ট বাংলাদেশের চার স্তম্ভের বাস্তবায়ন এগিয়ে নেওয়ার জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে।এ কারণে, ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২ এর প্রতিপাদ্য ছিল ‘প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি’। আগামী ‘৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ করতে গেলে ৪র্থ শিল্প বিপ্লব এর অগ্রাধিকার টেকনোলোজি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), রোবোটিকস, আইওটি ও সাইবার নিরাপত্তা হবে মূল বিষয় এবং এ ক্ষেত্রে অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে ভিত্তি তৈরি করেছেন, সে পথ ধরেই স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
    এক যুগের বেশি পথচলায় প্রমাণিত হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক উন্নয়ন দর্শন। এখন সরকারের লক্ষ্য ‘৪১ সালে বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’এ রূপান্তর করা। এক্ষেত্রে, ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে যদি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি , তাহলে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি এই চারটি মূল ভিত্তির ওপর নির্ভর করে আগামী ‘৪১ সাল নাগাদ একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

    লেখক: সহকারী তথ্য অফিসার, পিআইডি, বরিশাল।

    Share on facebook
    Share on twitter
    Share on whatsapp
    Share on linkedin
    Share on telegram
    Share on skype
    Share on pinterest
    Share on email
    Share on print

    সর্বাধিক পঠিত

    আমাদের ফেসবুক

    আমাদের ইউটিউব