আজ শনিবার ║ ২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সর্বশেষ:

    ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক তারেক রহমান

    Share on facebook
    Share on whatsapp
    Share on twitter

    বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে নেতৃত্ব, সংগ্রাম ও ত্যাগের প্রশ্ন এলে কিছু নাম স্বতঃস্ফূর্তভাবে উচ্চারিত হয়। কিন্তু হাসিনার ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের কথা আসলে সবার সামনে চলে আসে একটি নাম যিনি সুদূর লন্ডনে থেকেও নেতৃত্ব দিয়ে পতন ঘটিয়েছেন হাসিনার ফ্যাসিবাদের। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান। রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, নির্বাসন সবকিছুর ভেতর দিয়েও তিনি আজ বাংলাদেশের মানুষের আশার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

    তারেক রহমানের জন্ম ২০ নভেম্বর ১৯৬৭। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, যখন তার পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং দেশকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধ শুরু করেন, তখন তাকে, তার মা এবং তার ভাইকে, অন্যান্য আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য কারাবন্দী হওয়া সর্বকনিষ্ঠ কারাবন্দীদের একজন।
    ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করে ১৯৮০-এর দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, হবস, লক, রুশো, ভলতেয়ার, কার্ল মার্কস এবং অন্যান্য ব্যতিক্রমী চিন্তাবিদদের রাজনৈতিক চিন্তাধারা পড়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে, এরশাদ সরকারের পাতানো নির্বাচনের প্রাক্কালে, তিনি গৃহবন্দিত্ব এড়িয়ে এবং প্রেসক্লাবে একটি প্রেস কনফারেন্সে কীভাবে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলনকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তাঁর বর্ণনা করেন। ফলস্বরূপ, তার কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার জন্য, জেনারেল এইচ এম এরশাদের স্বৈরাচারী সরকার তাকে তার মায়ের সাথে গৃহবন্দী করে রাখে একাধিকবার।

    এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি তার মায়ের সাথে রাজপথে আন্দোলনে যোগ দেন এবং ১৯৮৮ সালে দলের গাবতলী উপজেলা ইউনিটে সাধারণ সদস্য হিসেবে বিএনপিতে যোগদান করেন। তিনি তৃণমূল থেকে জনগণকে সংগঠিত করেছিলেন এবং এইচ এম এরশাদের সরকারের পতনে অবদান রেখেছিলেন।১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে তিনি তার মা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচনে বিজয় অর্জন করেন। তার মা বেগম জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। চেয়ারপারসনের ছেলে হয়েও এবং তৃণমূল থেকে ব্যাপক সমর্থন পাওয়া সত্ত্বেও তিনি স্বজনপ্রীতি করে কোনো মন্ত্রিত্ব বা সংসদ সদস্যপদ গ্রহণ না করে দলের তৃণমূলের ক্ষমতায়নে মনোনিবেশ করেন। দল সংগঠনে তার প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে ২০০২ সালে স্থায়ী কমিটি তাকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে মনোনীত করে।

    ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সামরিক শাসকদের বেআইনি ক্ষমতা দখলের পর জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। তখনকার সরকারি দপ্তরের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা জানান যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ব্যক্তিরা দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের জনাব রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করতে বাধ্য করেছিল। এসময় তার মা বেগম জিয়াকে দেশত্যাগে বাধ্য করতে তাকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে যেতে হয়েছিল।

    তিনি ২০০৯ সালে বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ধীরে ধীরে বিএনপির পুনর্গঠনে যুক্ত হন। ২০১৮ সালে, যখন তার মা, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা অভিযোগে কারাগারে বন্দী হন, তখন তাকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন মনোনীত করা হয়। তখন থেকেই তিনি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।

    ২০০৭ সালের ১/১১ এর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে। মিথ্যা মামলা, কারাগারের অমানবিক পরিবেশ ও শারীরিক নির্যাতনে তিনি প্রায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে বাধ্য হন। সেই থেকে প্রায় ১৭ বছর ধরে তিনি দেশের বাইরে। প্রবাস জীবনে থেকেও তিনি রাজনীতি ছাড়েননি, বরং দলকে নতুনভাবে সংগঠিত করার চেষ্টায় অবিচল থেকেছেন।

    আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে বিএনপির ওপর নেমে আসে ব্যাপক দমন-পীড়ন।বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান ছিলেন আওয়ামী শিবিরের প্রধান প্রতিপক্ষ। ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক হেন কোন ষড়যন্ত্র, অপমান নেই যার সম্মুখীন তারা হননি। এত কিছুর পর তারেক রহমান প্রবাস থেকে বিএনপির কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে, খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকায় কার্যত পুরো দলের নেতৃত্ব ছিল তাঁর ওপর। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ও ছাত্র-যুব আন্দোলনেও তিনি নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে ওঠেন। আন্দোলনকারীরা তাঁর দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে সংগঠিত হয়। সরাসরি দেশে না থেকেও তাঁর নির্দেশনা ও দিকনির্দেশনাকে কেন্দ্র করেই আন্দোলন সংগঠিত হয়। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি প্রমাণ করেছেন, প্রবাস জীবন থেকেও একটি দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা সম্ভব।

    জনাব তারেক রহমানের অনন্যতা বোঝার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রথমত, দীর্ঘ সময় ধরে একদলীয় শাসন ও দমননীতির কারণে দেশে গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছে। সেই শূন্যতায় বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে জনগণের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নাম হয়ে উঠেছেন তিনি। দ্বিতীয়ত, তিনি বহন করছেন একটি ঐতিহাসিক ও মর্যাদাপূর্ণ রাজনৈতিক উত্তরাধিকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উত্তরাধিকার। এ কারণে জনগণ তাঁকে কেবল একজন রাজনৈতিক নেতা নয়, বরং পরিবারের ধারাবাহিক সংগ্রামের প্রতীক হিসেবেও দেখে।

    তৃতীয়ত, তাঁর জীবন সংগ্রাম ও ত্যাগে পূর্ণ। একের পর এক মিথ্যা মামলা, নির্বাসন, দমন-পীড়ন সত্ত্বেও তিনি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াননি। এই দৃঢ়তা ও আত্মত্যাগই তাঁকে জনগণের কাছে প্রকৃত নায়ক করে তুলেছে। চতুর্থত, যুবসমাজের কাছে তিনি এক অনুপ্রেরণা। সংগঠন পরিচালনায় প্রযুক্তির ব্যবহার, তথ্যভিত্তিক রাজনীতি এবং তরুণ নেতৃত্ব তৈরির উদ্যোগ তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। সর্বশেষ, প্রবাস জীবনেও তিনি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রায় দুই দশক ধরে দেশের বাইরে থেকেও তিনি বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন এবং নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ করেছেন। সব মিলিয়ে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান শুধু আবেগ নয়, বাস্তব প্রেক্ষাপটেও তাঁকে অনন্য করে তুলেছে।

    জনাব তারেক রহমানের সংগ্রামী জীবন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়। তিনি ভাই হারা হয়েছেন, নির্বাসনে থেকেছেন, মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়েছেন, কিন্তু জনগণের হৃদয় থেকে মুছে যাননি। বরং তিনি আজ কোটি মানুষের আশার প্রতীক।

    চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সপরিবার লন্ডনে পাড়ি জমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান; পরে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। প্রায় ১৭ বছর ধরে লন্ডনে আছেন তিনি। সেখান থেকেই নিজ বাসায় বসে অনলাইনে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। ভার্চুয়াল মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও অংশ নিয়ে আসছেন তিনি।

    একটি ছোট রুম, থাকে থাকে সাজানো বই, একটি চেয়ার, একটি টেবিল-টেবিলের উপর ডাইরি, কলম, আর একটি কম্পিউটার সঙ্গী করে-আমাদের প্রিয় নেতা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে প্রবাসের মাটিতে থেকেও দলের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।

    এই সীমিত পরিবেশে থেকেও তিনি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন, দেশ-বিদেশে নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর নিয়েছেন, দেশের মানুষের দুঃখ-কষ্টে পাশে থেকেছেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, সংকট দূরীকরণে নিরলসভাবে পরিশ্রম করেছেন।

    জুলাইয়ের শুরুতে যখন কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়, তখন তারেক রহমান প্রাথমিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার নির্দেশ দেন। তবে দলগতভাবে আন্দোলনে চূড়ান্ত অংশগ্রহণ শুরু হয় ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই থেকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ১৬ জুলাই আবু সাঈদ, ওয়াসিমরা শহিদ হলে হাসিনা পতনে এক দফার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আন্দোলনের সময় তারেক রহমান তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে ২৩টি টুইট করেন, ১৫টি ফেসবুক পোস্ট দেন। সাত বার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে উজ্জীবিত করেন।

    আন্দোলনের মাঝপথে ৯ দফা এবং ৮ দফায় ছাত্ররা যখন বিভক্ত হয়ে যান তখন আন্দোলনের লাটিম তুলে নেন তারেক রহমান। তিনি গত বছরের ২১ জুলাই জাতির উদ্দেশে ভাষণে ঘোষণা দেন ‘এক দফা এক দাবি, খুনি হাসিনার পদত্যাগ’। আন্দোলনকে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দলসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের কয়েকটি পয়েন্টে আন্দোলন ভাগ করে দেন। ছাত্রদলের সুপার ফাইভকে তিনি পাঁচটি পয়েন্টে ভাগ করে দেন। যুবদলকে দায়িত্ব দেন রামপুরায়। একইভাবে অন্যান্য সংগঠনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে ফেলেন। ঢাকা শহরের ২১টি পয়েন্টে তিনি একক নিয়ন্ত্রণ করে আন্দোলন চালিয়ে যান। ডিবি হারুণের হেফাজতে ছয় সমন্বয়ক থাকা অবস্থায় আন্দোলন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য ঢাকার আশপাশ থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় অবস্থান করান তিনি। তাদের বিভিন্ন মাধ্যমে পয়েন্ট-ভিত্তিক আন্দোলনে নামান। বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সক্রিয়ভাবে মাঠে নামান তারেক রহমান।

    সাবেক ছাত্ররা যারা জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিল তারা কিন্তু ৩ আগস্টের আগে কখনোই হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেনি। এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারবে না। কিন্তু বিএনপির পক্ষে ১ আগস্ট হাসিনা পতনে চূড়ান্ত অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন তারেক রহমান। যেটি বাস্তবায়নে রাজপথে ঝাঁপিয়ে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মী-শুভাকাঙ্ক্ষীরা। যে কারণে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি তথা চার শতাধিক শহিদের দল বিএনপি (১৪০ জনেরও বেশি ছাত্রদলের)। সবচেয়ে বেশি আহত ও পঙ্গু নেতাকর্মীর দল বিএনপি, সবচেয়ে বেশি রাজপথের যোদ্ধার দলও বিএনপি। রেইড চালিয়ে পল্টনসহ দেশ জুড়ে বিএনপির অফিসগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, গ্রেফতার করা হয়েছিল হাজার হাজার নেতাকর্মীকে, রিমান্ডে নিয়ে চালানো হয়েছিল পাশবিক নির্যাতন। রাজপথে সক্রিয় ছিলেন বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, অঙ্গ-সহযোগী ও পেশাজীবী প্রতিটি সংগঠনের সদস্য এবং নিবেদিতপ্রাণ সমর্থকেরা; ঠিক যেমন নেমে এসেছিলেন বাংলাদেশের প্রতিটি শ্রেণি, পেশা ও অবস্থানের ফ্যাসিবাদবিরোধী মানুষ। ভূমিকা রেখেছিলেন দেশ-প্রবাসের অগণিত অন্তঃপ্রাণ দেশপ্রেমিকরাও।

    ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন হাসিনা পতনের জন্য ৬ আগস্ট ঢাকায় অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়; তখন কিন্তু আন্দোলন এক দিন এগিয়ে ৫ আগস্ট করা হয় বিএনপির পরামর্শে। সেই মোতাবেক হাসিনাকে বিতাড়িত করে ছাত্র-জনতা। হাসিনা পতনের দিনই নাহিদ-আসিফরা চ্যানেল টোয়েন্টিফোর কার্যালয়ে তারেক রহমান ও তার মেয়ে জায়মা রহমানের সঙ্গে স্কাইপে কথা বলেন।

    আজ থেকে চার বছর পাঁচ বছর আগে তারেক রহমান বলেছিলেন- “দেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে”। তারেক রহমানের সুদূরপ্রসারী সেই চিন্তার কথাই প্রমাণিত হলো। সবার আগে বাংলাদেশ, এটাই বিএনপি’র রাজনৈতিক দর্শন।

    ২০১১ সাল থেকে ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সরকারের পদত্যাগে বাধ্য করার লক্ষ্যে এক দফা আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১২ জুলাই ২০২৩ ঢাকায় একটি বৃহৎ সমাবেশে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি উত্থাপন করা হয়। ১৩ জুলাই বিএনপি তাদের ৩১ দফার রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই রূপরেখা ঘোষণা করেন।রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের এই রুপরেখা জিয়াউর রহমান ঘোষিত ‘১৯- দফা’, বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত বিএনপি’র ‘ভিশন-২০৩০’ এর আলোকে এবং তারেক রহমানের ঘোষিত ২৭ দফা কর্মসূচির সংশোধীত ও সম্প্রসারিত রূপে প্রণীত হয়েছে। ৩১ দফা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রোডম্যাপ, বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে ৩১দফার আলোকেই পরিচালিত হবে আগামীর বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। যা তারেক রহমান এর বাংলাদেশ নিয়ে সুদূর প্রসারী চিন্তা ও দেশ প্রেমের উজ্জ্বল নিদর্শন। রাষ্ট্র সংস্কারের ভাবনা প্রথম তারেক রহমানই সামনে আনেন।

    আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বগুড়া-৬ আসন থেকে ভোটের মাঠে নামবেন।

    ডিসেম্বর মাসেই লন্ডন থেকে নির্বাসিত জীবন ছেড়ে দেশে আসবেন তারেক রহমান। এদেশের আপামর জনসাধারণ তারেক রহমানকে বরণ করে নিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

    সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২৩৭ জনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

    বগুড়া-৬ হলো জাতীয় সংসদের ৩০০ টি নির্বাচনী এলাকার একটি। এটি বগুড়া জেলায় অবস্থিত জাতীয় সংসদের ৪১ নম্বর আসন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ১ম বার জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবেন তারেক রহমান। হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে প্রিয় ছোট ভাই মরহুম আরাফাত রহমান কোকো’কে শেষ দেখা ও জানাজা পড়ার সুযোগও পান নাই। এদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে জিয়া পরিবারের প্রতি হাসিনার প্রতিহিংসা আজ সারাবিশ্ব অবগত। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দী করে রেখেছিলো নব্য ফেরাউন হাসিনা।

    জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে দুরে রাখতে হাসিনা গং কি করে নাই? ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেছে। হাসিনার তৈরী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গতো ১৭ নভেম্বর জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির আদেশের রায় ঘোষণা করেছেন। এ রায়ের খবর প্রকাশ করেছে বিবিসি, রয়টার্স, আল জাজিরা, আনাদোলু এজেন্সি, আনন্দবাজার, এনডিটিভিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

    জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শহীদদের ঋণ পরিশোধের বার্তা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত ১ জুলাই বিকাল তিনটায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদদের সম্মানে এই বিশেষ অনুষ্ঠানে গুমের শিকার পারভেজের কন্যার বক্তব্য শুনে কাঁদলেন তারেক রহমান। গুমের শিকার ছাত্রদল নেতা পারভেজের কন্যা নিধি। কিশোরী মেয়েটি বাবাকে দেখে না অনেক বছর। তার বক্তব্য শুনে কাঁদলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুমের শিকার ছাত্রদল নেতা পারভেজের কিশোরী মেয়ে নিধির আকুতি শুনে কেঁদে ফেলেন তারেক রহমান। জায়ান্ট স্ক্রিনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেখা গেছে চশমার ফাঁক দিয়ে বারবার চোখ মুছতে। নিধির রয়েছে ছোট্ট একটি ভাই। বাবাকে অনেক দিন দেখে না সে-ও। অনুষ্ঠানে নিধি তাই এই প্রশ্ন ছুড়ে দেয় ‘আমি আর আমার ভাই বাবাকে কি কোনোদিন জড়িয়ে ধরতে পারবো না?’ এমন প্রশ্নের উত্তর দেবার সাধ্য কার? গোটা পৃথিবী নিরুত্তর। অশ্রুসিক্ত হন তারেক রহমান। কষ্ট ভাগাভাগি করে নেন সেই কিশোরীর সঙ্গে। এমন মানবিক হাজার হাজার ঘটনার সাক্ষাী বিএনপি সহ দেশের আপামর জনসাধারণ।

    বাংলাদেশ আজ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর ৬১ তম জন্মদিনে জানাই বিপ্লবী শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

    লেখক: বি.এস.সি ইন ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, এল.এল.বি, সাবেক সহ দপ্তর সম্পাদক, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদল।
    মোবাইল: ০১৮১৯৬১৭৩৮০, E-mail: [email protected]

    Share on facebook
    Share on twitter
    Share on whatsapp
    Share on linkedin
    Share on telegram
    Share on skype
    Share on pinterest
    Share on email
    Share on print