আজ রবিবার ║ ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║৩০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ২২শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

সর্বশেষ:

    বাকাসস’র যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস জেলা প্রশাসকের

    Share on facebook
    Share on whatsapp
    Share on twitter

    চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেছেন, সূর্যের আলো নিয়ে চাঁদ যেমন আলো দেয়, তেমনি জেলা প্রশাসনের সহকারীরা সূর্যের মতো কাজ করে বলেই আমরা চাঁদের মতো জনগণের সেবায় কাজ করতে পারি। অথচ তাদের কাজের পরিধি অনুযায়ী পদোন্নতি হয় না। প্রশাসনের আটটি পদে একই ধরনের কাজ হলেও ভিন্ন নাম দিয়ে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আমি এই যৌক্তিক দাবির বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা করব।”
    শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউরিস্থ অফিসার্স ক্লাবে বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি (বাকাসস) আয়োজিত কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

    সম্মেলনে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৭ জেলার প্রায় ২৯০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। বাকাসস কেন্দ্রীয় এডহক কমিটির আহবায়ক এস এ আরিফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম জেলার সহ-সভাপতি নূরুল মুহাম্মদ কাদের এর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব, চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ও জেলা নাজির মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন বলেন “মাঠ প্রশাসনের সহকারীরা প্রশাসনের চালিকাশক্তি, অথচ তারা বছরের পর বছর অবহেলিত।”
    সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় এডহক কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আশ্রাফুল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জনাব আতাউর রহমান (ঢাকা), মোহাম্মদ হানিফ (কুমিল্লা), এস এম আতিয়ার রহমান (যশোর) আব্দুল বারেক মোল্লা (বরিশাল), আব্দুল মান্নান (ভোলা), এস এম জাকারিয়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মাহফুজ আলম (বরিশাল), বাবুল হোসেন (ফরিদপুর), নাহিদুল ইসলাম (সিলেট), স্বপন কুমার দাশ (চট্টগ্রাম), মোঃ মহসিন (শরীয়তপুর), মাহফুজুল আলম (প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বরিশাল) এবং সুমন (বান্দরবান)।

    মাঠ প্রশাসনের সহকারীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ:- একই ধরনের কাজ করেও পদবিন্যাসে বৈষম্য, বেতন কাঠামো ও পদোন্নতিতে অবিচার, ২৫-৩০ বছর চাকরি করেও পদোন্নতির সুযোগ দেয়া হয়নি।

    আন্দোলনের পটভূমি: ২০১৯ সাল থেকে বাকাসস বৈষম্য নিরসনে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। ২০২১ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের আটটি পদ একীভূত করে “সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা” পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ২০২২ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়ে যায় এবং তিন ভাগে বিভাজন করা হয়—যা নতুন করে বিভেদ সৃষ্টি করে। এ বৈষম্য নিরসনের দাবী বাকাসস কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনে জোরালোভাবে উত্থাপিত হয়।

    সম্মেলনে বাকাসসের তিন দফা দাবি:
    1. ২০২১ সালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আটটি পদ একীভূত করে “সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা” পদে রূপান্তর করতে হবে।
    2. ২০১০ সালের প্রজ্ঞাপন অনুসারে অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদকে পুনরায় “কম্পিউটার অপারেটর” পদে রূপান্তর করতে হবে।
    3. পদোন্নতিতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে সমতা নিশ্চিত করতে হবে।

    প্রশাসনিক বিশ্লেষণ:
    গবেষণা অনুযায়ী, একজন জেলা প্রশাসক বছরে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার নথি নিষ্পত্তি করেন, যার মূল প্রস্তুতকারী মাঠ প্রশাসনের সহকারীরা। অথচ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা গড়ে ৮-৯ বার পদোন্নতি পান, সহকারীরা পান সর্বোচ্চ একবার।
    বাকাসস কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস.এম. আরিফ হোসেন বলেন,
    “আমাদের আন্দোলন ছিল ন্যায়ের জন্য। ২০২১ সালের প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশা বাড়ছে। আমরা চাই প্রশাসনের দক্ষ জনশক্তির মর্যাদা নিশ্চিত হোক।” সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির জেলার এসএম আরিফ হোসেনকে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এবং মহাসচিব হিসেবে ঢাকা জেলার মোহাম্মদ আশ্রাফুল ইসলামকে নির্বাচিত করা হয়। সভায় আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
    এই সম্মেলন মাঠ প্রশাসনের সহকারীদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বর। এখন সময় এসেছে প্রশাসনিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার।
    জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০২১ সালের প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পুনরায় দাবি জানানো হয়। মাঠ প্রশাসনের সহকারীরা আশাবাদী, এবার তাদের কণ্ঠ শুনবে রাষ্ট্র।

    Share on facebook
    Share on twitter
    Share on whatsapp
    Share on linkedin
    Share on telegram
    Share on skype
    Share on pinterest
    Share on email
    Share on print