
স্বাধীন সংবাদমাধ্যম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কাগজ পত্রের এই লাইন যেন বাস্তবে মলিন। অন্যথায়, নিরাপত্তার প্রসঙ্গ এলেই সাংবাদিকদের এতো প্রশ্ন থাকবে কেন? অল্প কিছু সংবাদকর্মী সাংবাদিকতা সম্পর্কিত কোন সম্মেলনে একত্র হলেই প্রধান বক্তাদের উদ্দেশ্যে ছুড়েন একের পর এক প্রশ্নবান। বক্তারা উত্তরতো দেন ঠিকই কিন্তু সমাধান কোথায়?
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ডিআইইউ) ‘বাংলাদেশে স্থানীয় ও আঞ্চলিক গণমাধ্যমের জন্য অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক অষ্টম সিজেন বাংলাদেশ নেটওয়ার্কিং সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (২৮ অক্টোবর) বিরুলিয়ায় ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটিতে দুই দিনব্যাপী এ আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিভাগ এবং ডয়চে ভেলে অ্যাকাডেমি (ডিডব্লিউ) যৌথভাবে এ আয়োজন করে। সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম এবং যোগাযোগ বিভাগের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ, আঞ্চলিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এবং সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষকসহ প্রায় ৭০ জন প্রতিনিধি এ সম্মেলনে সমবেত হন। গুণীজনদের ভীড়ে অংশগ্রহনের সুযোগ হয় ১৫ জন শিক্ষানবীশেরও। যাদের একজন আমি। উদ্বোধনী অধিবেশনে ‘স্থানীয় ও আঞ্চলিক গণমাধ্যম: প্রতিকূল সময়ে টিকে থাকা’ শীর্ষক বক্তৃতায় প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক শাহেদ মোহাম্মদ আলী। ওই দিন অনুষ্ঠিত হয় ‘স্থানীয় ও আঞ্চলিক মিডিয়ার দৃশ্যপট বোঝা’ এবং অংশীজনদের নিয়ে ‘বাংলাদেশি আঞ্চলিক গণমাধ্যমের জন্য উদ্ভাবনী জীবিকার মানদণ্ড অন্বেষণ’ শীর্ষক দুটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন। এসময় “দৈনিক মাথাভাঙ্গা ” নামের একটি পত্রিকা নিয়ে বিশদ গবেষণা সহকারে সম্পাদক শাহেদ তুলে ধরেন বাংলাদেশের পত্রিকা অধ্যায়ের দুরবস্থা।
বক্তার কথন শেষেই একের পর এক প্রশ্ন আসতে তাকে সাংবাদিক ও শ্রোতা মহল থেকে। প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সংবাদ কর্মীদের দুরাবস্থা,নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঘাটতি,বেতন সংকুলতায় অদক্ষ নিয়োগসহ উঠে আসে নানা প্রসঙ্গ। উত্তরে তিনি বলেন,প্রায় একই প্রশ্নই সাংবাদিকরা করেন নতুন ভাবে। আনুমানিক ২০টা প্রশ্নের উত্তর তিনি দেন। তবে উত্তরগুলো যেন মনে হলো আগেও শোনা। সরকারী বিজ্ঞাপনের বিতরণ একটা সমবন্টনের ধারায় করা উচিৎ। সরকার একসময় ভর্তুকি দিতো কাগজে। বর্তমানে কাগজের বাজার চড়া,তাই সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেয়া গেলে মাথা উচু করে বাচবে এই ক্ষেত্র। বেশ কিছু প্রশ্নের ঘোলাটে উত্তরে শেষ হয়েছে প্রধান বক্তার পর্ব। সম্মেলনে ”আজকের পত্রিকার” সম্পাদকসহ এতোসব গুনীজন উপস্থিত ছিলেন যা লম্বা তালিকা ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি অব ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রতিনিধি উতে একার্টজ যখন বলছিলেন, ‘আমরা জানি, বাকস্বাধীনতার রেংকিংয়ে বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোতে খুবই নিচের অবস্থানে রয়েছে এবং এটি শেষ পর্যন্ত দেশের সামগ্রিক অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করবে বলে আমি মনে করি।’ ঠিক সে সময়ে জানতে পারি বিএনপির কর্মীদের দারা রাজধানীতে হামলার শিকার সাংবাদিকরা। বিএফইউজের দেওয়া বিবৃতিতে জানা যায়, সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বিএনপির কর্মীদের হামলায় অন্তত ১০ জন গণমাধ্যমকর্মী আহত হয়েছেন। হামলার সময় ভাঙচুর করা হয়েছে গণমাধ্যমকর্মীদের ক্যামেরা, ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে মোবাইল ফোন। তবে শুধু এই ঘটনা কিংবা বিএনপি নয়,নানা ঘটনায় অন্যান্যদলগুলোর হাতেও মার খেয়েছে সাংবাদিকরা।
সুতরাং জীবনের অনিশ্চয়তা সহ একটা পেশা হয়ে ওঠছে অর্থনৈতিক অভাবের। সম্মানটাও এখন সংকটে পরে যায় সুবিধাবোদী রাজনৈতিক কিংবা ব্যাবসায়ীদের হাতে।
সবশেষে এমন আয়োজনে আমন্ত্রিত করায় ধন্যবাদ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগ ও ডিডব্লিউ একাডেমি। পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সার্বক্ষনিক সহযোগীতা এবং দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন এ যাত্রায়।
শিক্ষানবিশ সাংবাদিক, দৈনিক সকালের সময়
শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ,পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি