নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ডুবে মৃতপ্রায় স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানী লিঃ (এসএওসিএল) আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কোম্পানীকে বাঁচানোর মূল কারিগরের ভূমিকায় কাজ করছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মণি লাল দাশ। তাঁর হাত ধরেই ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে ব্যবসা। বাড়ছে লাভের পরিমাণও। কয়েকবছরে ৯ কোটি থেকে ১৫০ কোটিতে ফিরেছে পুজি, আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরৎ আনতে পারলে আরো সচল হবে বলে আশা করছেন সিইও। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং অসৎ উদ্দেশ্যে সম্পূর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সরবরাহ করছে। একটি চক্র এই প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে নানা চক্রান্তে মেতে ওঠেছে। একসময় যারা এই প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলেন তারাই আবার লুটপাট করার চেষ্টা করছে। এর ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠানের সিইও সম্পর্কে বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশের চেষ্টা চালাচ্ছে।
জানা যায়, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহেদ ও তাদের সহযোগীদের অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৩১৬ কোটি টাকা লুট করার পর মরতে বসেছিল স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পাণী লিমিটেড (এসএওসিএল)। কিন্তু বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মনি লাল দাশের দক্ষতা ও বিচক্ষণতায় লাইফ সাপোর্ট থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) যৌথ মালিকানাধিন জ্বালানি বিপননকারী এই প্রতিষ্ঠানটি।
জানা যায় ২০২১ সালের মার্চের দিকে শাহেদ সিন্ডিকেটের অনিয়ম ধরা পরার পর ১২৪ জন শ্রমিককে ছাটাই করা হয়। পরে ওই বছরের নভেম্বর মাসে অনিয়মের ফলে মৃতপ্রায় এসএওসিএলকে জীবিত করার উদ্যোগ নেয় বিপিসি। প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব দেওয়া হয় বিপিসির মহাব্যবস্থাপকের (অর্থ) দায়িত্বে থাকা বিচক্ষণ অফিসার মনি লাল দাশকে। মাত্র ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা পুজি, প্রচন্ড মনোবল আর প্রচেষ্টা নিয়ে কাজ করতে থাকেন তিনি। দারুণ অর্থ কষ্ট থাকা সত্ত্বেও আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করতে করতে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছেন তিনি ও তাঁর টিম। কোন ব্যবসা ছিলনা আর ব্যবসা করার মতো যথেষ্ঠ টাকাও ছিলনা, কিন্তু সাহস হারাননি অল্প অল্প করে লুব অয়েল আমদানি করে বিক্রি শুরু করলেন। আস্তে আস্তে পুজি বাড়তে শুরু করল। বাড়লো কাজের পরিধিও। শুরু করলেন মার্কেটিং, বিক্রি শুরু করলেন ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল। ২০২১ সালে যেখানে অর্থের অভাবে ১০৯ জন শ্রমিক ছাটাই করেছিলেন একবছরের ব্যবধানে আবার ১২৭ জন শ্রমিক নিয়োগ দিলেন। বর্তমানে ১৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে এই মৃতপ্রায় প্রতিষ্ঠানের পুজি। বর্তমানে বিপুল পরিমাণ ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া লুবজোন ব্র্যান্ডের ইঞ্জিন অয়েল, গিয়ার অয়েল, সিএনজি ইঞ্জিন অয়েল, মোটরসাইকেল ,ইন্ডাস্ট্রিয়াল গিয়ার অয়েল,মেশিন অয়েল, এয়ার কম্প্রেসার অয়েল, আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক গ্রীজ বিক্রি করেও বেশ সুনাম অর্জন করেছে।
এব্যপারে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানী লিমিটেড (এসএওসিএল) এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনি লাল দাশ বলেন, প্রতিষ্ঠানটি প্রায় মরেই গিয়েছিল আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতায় তা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমাকে দায়িত্ব দেওয়ার এক বছরের মাথায় বর্তমানে আমাদের ১৫০ কোটি টাকার মতো পুজি আছে, আমরা এই পুজিতে চালিয়ে নিচ্ছি। আশা করছি আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের বদনাম গুছিয়ে সুনাম ফিরে আসবে। আর এজন্য সকলের আন্তরিক সহযোগীতা প্রয়োজন। কিন্তু একটি স্বার্থন্বেষি মহল আছে যারা এসএওসিএল’র উন্নতি সহ্য করতে পারছেনা, তারা আমাকে নিয়ে বিভিন্নভাবে চক্রান্ত চালাচ্ছে। ভুল তথ্য দিয়ে কয়েকটি মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করিয়েছে। সম্প্রতি আমার নামে হাজার কোটি টাকা লোপাট বা মামলার যে তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা আমাকে ব্যথিত ও মর্মাহত করেছে। প্রকৃতপক্ষে আমার এমন কোন অনিয়ম বা মামলা নেই। আমি দায়িত্ব নেয়ার পূর্বে যা ঘটেছে তার দায় আমার উপর চাপানোর চেষ্টা করছে চক্রটি। সাংবাদি হলো জাতির বিবেক, তাই যেকোন সংবাদ প্রকাশের আগে তথ্য যাচাই বাছাই করা উচিৎ।
পুর্বের অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাতকৃত অর্থের ব্যপারে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও আনুসাঙ্গিক খরচ বাবদ মাসে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার মতো খরচ আছে। লুট হওয়া টাকাগুলো ফেরৎ আনার জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। কয়েকটি মামলা চলমান আছে। ২ টি লিফট এর ২৮ লাখ টাকা এবং বিটুমিন বিক্রির বকেয়া টাকা ফেরৎ আনা হয়েছে। বাকি আত্মসাৎ করা অর্থগুলো ফেরৎ আনতে পারলে এটি আরো সচল হবে, একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হবে।
উল্লেখ্য কোম্পানীর জন্য ২৮ লাখ টাকায় কেনা দুটি লিফট ব্যবহৃত হয়েছিল নগরীর খুলশী থানার ন্যাশনাল পলিটেকনিক কলেজে ব্যবহার করা হয়েছিল। বিটুমিন বিক্রীর দুই কোটি ৮৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছিল। দুটি ঘটনায় পরিষদ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মামলা করে টাকা ফেরৎ আনা হয়েছে। সরকারের অর্ধেক মালিকানার তেল কো¤পানি ৩১৬ কোটি টাকার মধ্যে এসএওসিলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহেদ ১৫০ কোটি ও তার সহযোগীরা ১৬৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছিল। এসব টাকা ফেরৎ আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে।