চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে শপথ নিলেন নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। চট্টগ্রাম সিটি মেয়রকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ।
রোববার (৩ নভেম্বর) সকালে সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগ সচিব মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টা হাসান আরিফ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ডা. শাহাদাত হোসেন বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশের একটি প্রধান নগরীর মেয়র হয়েছেন। ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের শিক্ষাকে বুকে ধারণ করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবেন, এটাই তার কাছে প্রত্যাশা করি। আমরা গ্রিন চট্টগ্রাম দেখতে চাই। জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম দেখতে চাই। ক্লিন সিটি হিসেবে নগরবাসীরও একই প্রত্যাশা।
তিনি আরও বলেন, পেছনের সব ধ্যান-ধারণা, চিন্তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ছাত্র-জনতা-শ্রমিকদের যে অর্জনের জন্য তাদের আত্মত্যাগ রয়েছে, সে প্রত্যাশা পূরণের জন্য বৈষম্যহীন শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় মেয়র শাহাদাত হোসেনের কাছে দেখতে চাই। আমি মনে করি, এ প্রত্যাশা চট্টগ্রামের প্রতিটি নাগরিকের। আমাদের প্রত্যাশা বৈষম্যহীন বাংলাদেশের।
শপথ নিয়ে ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, চট্টগ্রাম বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে। যদি চট্টগ্রাম শহরের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপ করা যায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি। গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি, হেলদি সিটি- এসব আমার নির্বাচনী ইশতেহার। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব।
উল্লেখ্য, বিজ্ঞ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও যুগ্ম জেলা জজ, ১ম আদালত চট্টগ্রাম কর্তৃক চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (BNP) মনোনীত ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থী শাহাদাত হোসেন-কে নির্বাচিত মেয়র ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। বিজ্ঞ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের আদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বাংলাদেশ গেজেটে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে জনাব শাহাদাত হোসেন-কে নির্বাচিত ঘোষণা করে সংশোধিত গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সরকারি গেজেট প্রকাশিত হওয়ার ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে সরকার বা তৎকর্তৃক মনোনীত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাদের শপথ গ্রহণের বিধান রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সানুগ্রহ সম্মতিতে আজকের এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
উক্ত শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, বিএনপি’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, জেলা ও দায়রা জজ আদালত চট্টগ্রামের পিপি এডভোকেট আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক, মহানগর দায়রা জজ আদালত চট্টগ্রামের পিপি এডভোকেট মফিজুল হক ভূঁইয়া, বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের পিপি এডভোকেট কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ, ব্রিগেডিয়ার (অবসরপ্রাপ্ত) রাশেদুল মান্নান, মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আইয়ুব চৌধুরী, এয়ার কমোডর (অবসরপ্রাপ্ত) মো. মাইনুদ্দিন প্রমুখ।
শপথের পর তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে যান মেয়র ডা. শাহাদাত। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রাম মহানগরের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
১৯৬৬ সালের ২ জুন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হরলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শাহাদাত হোসেন। ছাত্রদলের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা রাখেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এমবিবিএস পাস করার পর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি ছিলেন তিনি। বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকও করা হয়েছিল ডা. শাহাদাতকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় তাকে। তিনি নগর বিএনপির একাধারে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করার পর সর্বশেষ আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি পেশা জীবনে একজন সফল চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর তিনি ফিজিক্যাল মেডিসিন বিষয়ে এমডি করেন। চিকিৎসা পেশায় বেশ সুনামও রয়েছে তাঁর।