আজ সোমবার ║ ২১শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║৬ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ২৬শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

সর্বশেষ:

    নির্বাচনের টানেলে ঢুকে গেছি, জনগণের দুয়ারে যান : আমীর খসরু

    Share on facebook
    Share on whatsapp
    Share on twitter

    আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতাকর্মীদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

    নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা কিন্তু নির্বাচনের টানেলে ঢুকে গেছি। সবাই নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন। জনগণের দুয়ারে যান।

    তিনি সোমবার (২১ জুলাই) বিকালে কা‌জির দেউরী নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যাল‌য়ের সামনে নূর আহমদ সড়কে সরকারের নির্লিপ্ততায় সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দ‌লের উদ্যোগে কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

    চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহারের পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান।

    দলের কর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে উঠান বৈঠক আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, প্রত্যেকের এলাকায় মানুষের বাড়িতে বাড়িতে যান এবং উঠান বৈঠক করেন। মানুষ আপনার কাছে আসবে না, আপনাদের যেতে হবে। ওই আগের মতো বক্তব্য দিয়ে হবে না, জনগণের দোয়ারে দোয়ারে যেতে হবে।

    সবাইকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন শুরু হয়ে গেছে। সবাই মিলে কাজ করতে হবে। যার যার এলাকায় সবাই নির্বাচনী কার্যক্রমে নেমে যান।

    তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম, শেখ হাসিনার পলায়নের পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি সহনশীলতা, পরষ্পরের প্রতি সম্মানবোধ, রাজনীতিতে ইতিবাচক একটা পরিবর্তন আসবে। দেশের মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, জীবন দিয়েছে, গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য। গণতান্ত্রিক পরিবেশ তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে, যখন একটা রাজনৈতিক দল অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতি ভিন্নমত পোষণ করেও সম্মান জানাবে, সহনশীলতা দেখাবে।

    তিনি আরও বলেন, কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি সেটা হচ্ছে, কিছু রাজনৈতিক দল তারা শিক্ষা নেয় নাই। তারা শেখ হাসিনার কাছ থেকে ওই বদঅভ্যাসগুলো এখনো বাংলাদেশে চালু রাখতে চায়। শেখ হাসিনাকে এ ধরনের চরিত্রের জন্য বাংলাদেশের মানুষ বিতাড়িত করেছে। সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি বাংলাদেশের মানুষ আর গ্রহণ করবে না। সুতরাং আগামী দিনের রাজনীতি পরিষ্কারভাবে পরষ্পরের সম্মানবোধের রাজনীতি হতে হবে, সহনশীলতার রাজনীতি হবে, একে অপরের সাথে ভিন্নমত পোষণ করেও সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।

    আমীর খসরু বলেন, যারা ব্যক্তিগত চরিত্র হননে নেমেছেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অশালীন বক্তব্য রাখছেন, উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বাংলাদেশের মানুষ আজকে ভিন্ন রাজনীতি দেখতে চায়, সুষ্ঠু, সম্মানজনক রাজনীতি দেখতে চায়। সুতরাং বিএনপি সেটাকে ধারণ করে, আমরা সেই পথে চলছি। সুষ্ঠু রাজনীতির পথে চলছি, সহনশীল রাজনীতির পথে চলছি, পরষ্পর সম্মানবোধের রাজনীতির পথে আমরা চলছি।

    তিনি বলেন, এই যে অসম্মানজনক আচরণ এটার পিছনে উদ্দেশ্য একটা। উদ্দেশ্য হচ্ছে, আগামীদিনে বাংলাদেশের মানুষ যাদের ভোট প্রয়োগ করে, তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে, সংসদ গঠন করে, সরকার গঠন করে, তার মালিকানা প্রয়োগ করবে ভোটের মাধ্যমে, তারা সেটা চায় না। তারা ভোট চায় না। তারা চায় অশান্তি! বাংলাদেশকে অশান্ত করার জন্য চায়। তবে ওই দিন এখন আর নাই। বাংলাদেশের মানুষ স্থিতিশীলতা চায়, বাংলাদেশের মানুষ সংযম চায়, বাংলাদেশের মানুষ সহনশীলতা চায়, বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়ন চায়, বাংলাদেশের মানুষ তার জীবনযাপন উন্নত করার অপেক্ষায় আছে। আগামীতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে সরকার এনে দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার অপেক্ষায় আছে।

    তিনি বলেন, আর যারা নির্বাচন চায় না, তাদের প্রতি অনুরোধ, আপনি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, কিন্তু আপনি নির্বাচন চান না। তাহলে রাজনৈতিক দল গঠন করার তো কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি রাজনীতি করবেন, নির্বাচনে যাবেন না, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবেন, তাহলে আপনার তো রাজনৈতিক দল গঠন করার প্রয়োজন নাই। আপনি আজই রাজনীতি ছেড়ে দেন। আরেকটা কাজ করতে পারেন, সেটা প্রেসার গ্রুপের কাজ করতে পারেন। কারণ প্রেসার গ্রুপ দরকার। রাজনীতিবিদদের সিদ্ধান্ত যদি খারাপ হয়, সিদ্ধান্তে যদি ভুল হয়, প্রেসার গ্রুপের একটা কাজ আছে। আপনি সেই দায়িত্বটা নিয়ে নেন। শুধু রাজনৈতিক দলের চেহারা দেখাবেন, কিন্তু ভোট করতে দেবেন না, জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেবেন না।

    তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মালিকানার কথা গত ১৭ বছর ধরে বলে যাচ্ছি। বাংলাদেশের জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে। তার বিরুদ্ধে আপনাদের অবস্থান। এ অবস্থানে থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এগোনোর কোনো সুযোগ হবে না। সে যে দলই হোক। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে দেশের মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন হয়েছে। তারা পরিবর্তন চায় এবং পরিবর্তনটা আসবে নির্বাচনের মাধ্যমে। আর তৃতীয় কোনো পথ নাই। নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ হবে সরকার হবে, তারাই বাংলাদেশের পরিবর্তন আনবে মানুষের মেন্ডেট নিয়ে। জনগণের সমর্থন নিয়ে এ পরিবর্তন করবে। এর বাইরে কোনো পরিবর্তন করার কারো অধিকার নেই।

    আমীর খসরু বলেন, ঐক্যমতের চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু ঐক্যমত যতটুকু হবে ততটুকু। তার বাইরে কিছু করার চেষ্টা করবেন না। এর বাইরে কিছু করতে হলে ওই জনগণের কাছে যেতে হবে। আপনার মেন্ডেট নিতে হবে। সুতরাং ঢাকা শহরে বসে কিছু বিজ্ঞ লোক যদি মনে করে তারা বাংলাদেশের আগামীর ভবিষ্যৎ ঠিক করে দিবে! আমি দুঃখিত, সেই কাজটির দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয়নি। সেই কাজ কেউ করতে পারবে না। পরিবর্তন আনতে হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, জনগণের সমর্থন নিয়ে, জনগণের মেন্ডেট নিয়ে, তারেক রহমান সাহেব সেই দিকে বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে।

    প্রধান বক্তার বক্তব্যে মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, একটি মহল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অনবরত মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও তারেক রহমানের বৈঠকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়েও ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচনে যাদের ভরাডুবি হবে তারাই এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মানে বাংলাদেশ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। সরকারকে বলতে চাই, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আওয়ামী লীগের আমলে কোন নির্বাচন হয়নি। জনগণ ভোট দিতে পারেনি। তাই জনগণ এখন ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।

    বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, বিএনপি শহীদ জিয়ার দল হিসেবে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, ৭১ এর পরাজিত শক্তি একটি তরুণ সমাজের অংশকে বিভ্রান্ত করে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম চালাতে পরিচালিত করছে। এই তরুণদের একটি অংশ আমাদের সাথে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল। আমরা আহ্বান জানায়, গণতন্ত্রের পথে থাকুন, বাংলাদেশের সাথে থাকুন। দেশবিরোধী শক্তির খপ্পরে পড়ে নিজের মান সম্মান ও রাজনৈতিক অবস্থান হারাবেন না। স্বাধীনতা বিরোধী দলটি অতীতে যাদের সাথে জোট করেছে তাদের পতন হয়েছে।

    বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আবুল হাশেম বক্কর বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে নিয়ে যারা কটূক্তি করেছে, সেটির প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং হুঁশিয়ার করছি। এমন কোনও বক্তব্য দেওয়া ঠিক হবে না যাতে বাংলাদেশের অস্থিরতাকে আরও বেশি উসকে দেওয়া হয়। গণতন্ত্রে মত প্রকাশের সুযোগ আছে, বিএনপি সেটা ধারণ করে। বিএনপির নেতাকর্মীরা অত্যন্ত ধৈর্যশীল। বিএনপির নেতাকর্মীরা গণতন্ত্রের অনুসারী। স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রকে যারা বিশ্বাস করে তারা ধৈর্যশীল।

    বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নাজিমুর রহমান বলেন, দেশ নায়ক তারেক রহমানকে কটুক্তি ও বিএনপির বিরুদ্ধে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। যা আর সহ্য করা হবে না। দেশ গঠনে যখন শহীদ জিয়ার সুযোগ্য সন্তান তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়েছেন, তা দেখেই বিএনপিকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে মেতেছে একটি কুচক্রী মহল।

    সভাপতির বক্তব্যে এ এম নাজিম উদ্দীন বলেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া মানুষের কাঙ্খিত পরিবর্তন আসবে না। সেই পরিবর্তনের জন্য একটা নির্বাচিত সরকার লাগবে। বর্তমান সরকার হচ্ছে একটা অন্তর্বর্তী সরকার, তাদের কাজ হচ্ছে কিছু নির্বাচনি সংস্কার করে একটা নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত করা।

    এতে বক্তব‌্য রা‌খেন মহানগর বিএন‌পির যুগ্ম আহবায়ক হারুন জামান, মো. শাহ আলম, ইয়া‌ছিন চৌধুরী লিটন, মনজুর আলম চৌধুরী মনজু, শ্রমিক দল কেন্দ্রীয় ক‌মি‌টির সাংগঠ‌নিক সম্পাদক শ ম জামাল উ‌দ্দিন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দ‌লের সি‌নিয়র সহ সভাপ‌তি মো. ই‌দ্রিস মিয়া, সহ সভাপ‌তি এম আর মনজু, মোছাম্মৎ শা‌হে‌নেওয়াজ চৌধুরী মিনু প্রমূখ।

    Share on facebook
    Share on twitter
    Share on whatsapp
    Share on linkedin
    Share on telegram
    Share on skype
    Share on pinterest
    Share on email
    Share on print