
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সহকারী প্রকৌশলী (পুর) মো. নুরুস সফি রাউজানের স্থায়ী বাসিন্দা। অমায়িক, সৎ ও মেধাবী প্রকৌশলী হিসেবে তার রয়েছে বেশ খ্যাতি। ১৯৯৯ সালে থেকে প্রায় ২৫ বছর যাবত তিনি চবক এর সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানেও তাঁর চাকুরী উন্নয়ন খাত থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হয়নি। প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম মেনে অতীতে তার বঞ্চনার কথা তুলে ধরে চাকুরী নিয়মিতকরণের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করে আসছিলেন। বন্দর কর্তৃপক্ষ বরাবরে সর্বশেষ আবেদনটি করেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস সরকারের বিদায়ের পর ডিসেম্বর ২০২৪ সালে। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে তাঁর চাকুরী স্থায়ী করা হয়নি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বিগত সময়ে রাজনীতির সাথে জড়িত না থেকেও ‘জামায়াত-বিএনপি’ ট্যাগ দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে অহরহ। প্রকৌশলী মো. নুরুস সফিকেও বিএনপি ট্যাগ দিয়ে চাকুরী স্থায়ীকরণ থেকে বঞ্চিত করা হয়।
প্রকৌশলী মো. নুরুস সফি ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত না থাকলেও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক খুবই গভীর, দুঃখ ভারাক্রান্ত ও স্মৃতিময়। তাঁর শ্রদ্ধেয় মরহুম পিতা কবির আহমদ এর সাথে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সম্পর্ক ছিল খুবই ঘনিষ্ঠ। এখনো এলাকায় লোক মুখে প্রচার আছে শহীদ জিয়া এবং বেগম খালেদা জিয়া কবির আহমদকে ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করতেন। কবির আহমদ রাউজান উপজেলার পাহাড়তলীর ‘গ্রাম সরকার’ প্রধান ছিলেন। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কবির আহমদ রাউজান থানা বিএনপির কৃষি বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছিলেন।
৩০ মে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ৮ম রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) এর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮১ সালের ৩০ মে হৃদয় বিদারক হত্যাকাণ্ড শুধু একটি প্রাণের অবসান নয়, ছিল একটি সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রচিন্তার ওপর আঘাত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা কর্তৃক নিহত হন তিনি। জিয়া তার রাজনৈতিক দল বিএনপির স্থানীয় নেতাদের মধ্যে সংঘটিত একটি সংঘর্ষের মধ্যস্থতা করতে চট্টগ্রামে আসেন। সে রাতে একদল সেনা কর্মকর্তা চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জিয়াসহ আরও কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করে। শহীদ জিয়ার এবারের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকীটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি পালিত হচ্ছে ‘জুলাই বিপ্লব’-পরবর্তী নতুন সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে। যেখানে বাংলার মানুষ আবার সত্য, ন্যায়ের পথে হাটার সাহস পেয়েছে। জিয়াউর রহমানকে হত্যার পরদিন কতিপয় সেনা কর্মকর্তা ও সেনা সদস্য রাঙ্গুনিয়ার পোমরা ইউনিয়নে রাস্তার পাশে কবরস্থ করেন। শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে ১৯৮১ সালে চুয়েট ক্যাম্পাস স্কুলের ৭ম শ্রেণির ছাত্র, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী (পুর) মো. নুরুস সফির স্মৃতিচারণমূলক কথাগুলি এখানে উদ্বৃত হল। মো. নুরুস সফি বলেন, নিয়তির পরম পরিহাস তার মরহুম বাবা কবির আহমদ নিজের বাগান বাড়িতে পুত্র তুল্য স্নেহ ও ভালোবাসার মানুষটির দাফন তার নিজের হাতেই করেছেন। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় দ্রুততার সাহিত দাফন কার্য সম্পন্ন করতে ৫/৭ জন স্থানীয় লোকজন যোগাড় করা হয়। তার বাবা (কবির আহমদ) তখনও জানতেননা যে, কার লাশ দাফন করেছেন তারা। সেনা সদস্যরা কাউকে কোন কথা বলার সুযোগ দেয়নি। একই কাপড়ে মোড়ানো তিনটি মৃতদেব একই সাথে একই কবরে রেখে মাটি ছাপাদিয়ে তারা দ্রুত গতিতে স্থান ত্যাগ করেন। এদিকে স্থানীয়দের মাঝে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এলাকায় প্রচার হয়েছে মেজর জিয়াউর রহমান নিহত হয়েছেন। দু’দিন পর ১ জুন একদল সেনাবাহিনী এসে কবর খুঁড়ে লাশগুলো নিয়ে যায়। তখন কবির আহমেদ সহ স্থানীয়রা দেখতে পান লাশগুলোর মধ্যে রয়েছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের লাশটিও। অন্য দুটি লাশ ছিল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেহ রক্ষীর। তখন থেকেই খাদেম হিসেবে ‘রাঙ্গুনিয়ায় জিয়ার প্রথম মাজারটি’ দেখবাল করতেন তিনি। বর্তমানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালনাধীন এই মাজারের যাবতীয় কার্যক্রমে আমাদের পরিবারের সার্বিক সহযোগিতা রয়েছে।
মো. নুরুস সফি আরো বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে ঘটনা চক্রে আমার বাবার সাথে শহীদ জিয়ার পরিচয় ছিল। শহীদ জিয়াকে আমার বাবা একটি বিপদ থেকে রক্ষা করেছিলেন। সে সময় হতে স্বাধীনতা যুদ্ধের পরও আমাদের পরিবারের সাথে শহীদ জিয়ার যোগাযোগ হতো। তিনি চট্টগ্রাম আসলে আমার বাবার সাথে দেখা সাক্ষাত হতো। এমনকি সার্কিট হাউসের মর্মান্তিত ঘটনার দিনও আমার বাবার সাথে দেখা হওয়ার সুযোগ হয়েছিল।