কর্ণফুলীর তিন ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি ঝুলিয়ে রেখে দলের ভেতরে বাহিরে গ্রুপিং বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ ৯ বছর পর সম্মেলন করে চরপাথরঘাটা ও জুলধা ইউনিয়নে কমিটি দিলেন। কিন্তু বাকি রয়েছে আরও তিন ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি। যা দিতে চাইলেও পারতেছেনা নাজিম-সেলিম পরিষদ।
এতে শিকলবাহা, বড়উঠান ও চরলক্ষ্যা এই তিন ইউনিয়নে সভাপতি-সম্পাদক পদে ৫৭ জন প্রার্থী এগিয়ে এসেছেন। এরই মধ্যে সম্ভাব্য কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে শীর্ষ দুই পদের জন্য। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনের জল্পনা-কল্পনা, নেতাকর্মীদের ধারণা, কিংবা গণমাধ্যমের গুঞ্জন-সবকিছুকে হার মানতে পারে। থাকতে পারে তিনি ইউনিয়নের যুবলীগের নতুন নেতা নির্বাচনে চমকও।
শিগগরই তিন ইউনিয়নে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা না গেলে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তা প্রভাব ফেলবে। কিন্তু যারা নেতা নির্বাচন করবেন তাঁদের রয়েছে আলাদা আলাদা বলয়। আবার যে ৫৭ জন প্রার্থী শীর্ষ দুই পদের জন্য আবেদন করেছেন। তাঁরাও একেক জন একেক নেতার অনুসারি। অনেকের ব্যক্তিগত অর্জন বলতে কিছু না থাকলে নেতার পিছনে দেওয়া সময়কে পুঁজি করে হাত বাড়াচ্ছেন-সভাপতি সম্পাদক পদ ছিনিয়ে নিতে। সুতরাং সংগঠনটিতে ক্লিন ইমেজের নেতা উপহার দিতে অনেক সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে দক্ষিণ জেলা যুবলীগ, কর্ণফুলী আ.লীগ ও কর্ণফুলী যুবলীগকে।
সূত্র মতে, যারা সুবিধাবাদী এবং বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের তালিকাও কিন্তু কম দীর্ঘ নয়। একই সঙ্গে যোগ্য নেতাদের একটি গোপন তালিকাও নেতাদের হাতে। নেতারাই কর্ণফুলীতে ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি দেবেন। তাই তদবির তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে আগ্রহীরা।
নীতিনির্ধারকদের একটি সূত্র জানায়, কর্ণফুলীর তিন ইউনিয়নে এবার এমন নেতাদের হাতে নেতৃত্ব দিতে চান, যাদের হাতে যুবলীগ ফিরে পাবে তাঁর হারানো গৌরব। এজন্য বিভিন্ন মাধ্যমে নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। পরিচ্ছন্ন ইমেজ, দক্ষ সংগঠক, পরিবারে রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড আছে এমন কাউকে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে বিভিন্ন সুত্রের মাধ্যমেও খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যেই প্রভাবশালী ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ যার যার অবস্থান থেকে প্রার্থিতা জানান দিতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেগুলো খুব একটা পানি পাচ্ছে না।
তথ্যমতে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে অনেকেই আলোচনায় এসেছেন। তিন ইউনিয়নে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে নেতা হতে লড়বেন মোট ৫৭ জন প্রার্থী। এতে তিন ইউনিয়নে সভাপতি হতে চান ২৬ জন, সম্পাদক হতে ৩১ জন এবং উভয় পদে ৬ জন প্রার্থী জীবনবৃতান্ত জমা দিয়েছেন।
এতে চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন যুবলীগে সম্ভাব্য সভাপতি পদে প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে-মনজুরুল হক, মো. ওমর ফারুক বিজয়, মো. সাইদুল ইসলাম, এ.এম বাহা উদ্দিন, মো. লোকমান হাকিম, মোহাম্মদ মনির উদ্দিন মুন্না, মো. হাসান মুরাদ ও মো. সেকান্দর মির্জা। সম্পাদক পদে রয়েছেন-মো. জাহাঙ্গীর আলম জাবেদ, মো. জাকারিয়া, মো. সালা উদ্দিন টিপু, মো. জয়নাল আবেদীন, মো. তসলিম, মো. আলমগীর আলম, মো. মহসিন। এছাড়াও মো সেকান্দর মির্জা, মো. ওমর ফারুক বিজয়, মো. হাসান মুরাদ ও মনজুরুল হক সম্পাদক পদেও প্রার্থী হয়েছেন। তবে তৃণমূল নেতারা বলছেন মো. সাইদুল ইসলাম, মো. হাসান মুরাদ ও লোকমান হাকিমের কথা।
শিকলবাহা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি পদে আগ্রহী হয়েছেন-মোহাম্মদ আলমগীর কবির, মোহাম্মদ আবদুল আলিম, মো. ওয়াহিদ আদনান মুন্না, সেলিম উদ্দিন সানী, মোহাম্মদ ইদ্রিছ হোসেন, মো. আব্দুর রহিম লোকমান, মো. জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল্লাহ আল মামুন, মোহাম্মদ রফিক ও এম.এ রহিম। সম্পাদক পদে আগ্রহী-নুরুল হুদা সোহেল, আবদুল করিম মঞ্জু, মো. জসিম, মো. আমিন, আবদুল খালেক জুয়েল, আজগর টিপু, মো. শফি তালুকদার, মো. লোকমান হাকিম, মো. মোক্তার হোসেন, মুমিন তালুকদার। এছাড়াও সেলিম উদ্দিন সানী ও এম.এ রহিম সম্পাদক পদেও প্রার্থী হয়েছেন। এখানে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতির উপর সবাই থাকিয়ে আছেন। যদিও রফিক, এম.এ রহিম, মঞ্জু ও লোকমানের কথা অনেকেই জানাচ্ছেন।
বড়উঠান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন-বাহাদুর খান, মুহাম্মদ মহি উদ্দিন, শেখ মো. আব্দুল হান্নান, মুহাম্মদ আলমগীর, মুহাম্মদ ইলিয়াছ মেম্বার, মো. আব্দুর রহিম চৌধুরী, মো. মহিউদ্দিন রানা ও মো. আনিছ উদ্দিন। সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন-ইনামুল হোসেন, মো. পারভেজ ইসলাম টিটু, আবদুল করিম, মুহাম্মদ ফোরকান, মুহাম্মদ আজগর আলী, মুহাম্মদ খোরশেদ উল্লাহ চৌধুরী, মুহাম্মদ সাজ্জাদ খান সুমন ও মো. শাহাদাত হোসাইন রিটন। আলোচনায় ঘুরে ফিরে চাওর রয়েছে ইলিয়াছ-রিটন কিংবা হান্নান-ইনামুল।
দুই ইউনিয়নে কমিটি দেওয়ার পর কেন বাকি তিন ইউনিয়নে কমিটি হচ্ছে না জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজিম উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘আমরা কমিটি আটকে রাখিনি। যেকোন মূহুর্তে কমিটি দেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন রয়েছে। চেষ্টা করতেছি কমিটি দিতে। কিন্তু নানা কারণে এখনো দিতে পারিনি। যদিও দুই শীর্ষ পদে তিন ইউনিয়নে ৫৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো, সাবেক ছাত্রনেতা, ক্লিন ইমেজ দেখে আমরা নেতৃত্বে আনব। তিন ইউনিয়নে তিনটি শক্তিশালী কমিটি উপহার দিতে চাই। যারা আগামী নির্বাচনে আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর হাতকে শক্তিশালী করবে।’
কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদধারী মুহাম্মদ সেলিম হক কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এখন প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করার জন্য বিভিন্ন ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। ব্যস্ত সময় পারছি। আশা করি সমাবেশের পরেই, বাকি তিন ইউনিয়ন গুলোতে যুবলীগের কমিটি ঘোষণা করা হবে।’