বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের পর অবশেষে চট্টগ্রাম ওয়াসার বিতর্কিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ ও পরিচালনা পর্ষদকে অপসারণ করেছে সরকার। বুধবার (৩০ অক্টোবর) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বিভাগের উপসচিব মোঃ আব্দুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্বভার গ্রহন করলে আওয়ামী সরকারের সকল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করেন। সরকারের সেই সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে পতিত সরকারের দোসর চট্টগ্রাম ওয়াসার টানা ১৬ বছর ধরে অবৈধভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকার পরেও লোভনীয় সেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদ আখড়ে থাকার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তদবির ও অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন। ইতিমধ্যেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদেরকে আওয়ামীলীগ সরকারের মতো ম্যানেজ করার চক্রান্ত ও ফন্দি ফিকিরে ব্যস্ত। তাই অনতিবিলম্বে চট্টগ্রাম ওয়াসার বিতর্কিত ও নানা অনিয়মে অভিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহর আমলে সংঘটিত সকল দূর্নীতি-অনিয়মের তদন্ত করে শাস্তির আওতায় আনা ও তার দেশত্যাগে দ্রুত নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি করেন দেশের ক্রেতা ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটির নেতৃবৃন্দ।
৩১ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের প্রেসিডেন্ট জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা প্রেসিডিন্ট আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু হানিফ নোমান প্রমুখ।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বহু বিতর্কে ও অনিয়মে জড়িত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহকে অপসারন করে অর্ন্তবর্তকালীণ সরকার চট্টগ্রামবাসীকে একজন দুর্নীতিবাজ বহু অনিয়মের হোতাকে অপসারন করে ওয়াসার মতো একটি সেবা প্রতিষ্ঠানের অপশাসন ও দুঃশাসনের কবল থেকে উদ্ধার করলেন। চট্টগ্রামবাসীকে একজন স্বৈরশাসকের দোষর হতে উদ্ধার করে ওয়াসাকে জনগনের প্রতিষ্ঠানে পরিনত করার সুযোগ করে দিলেন। বিগত সরকারের আমলে এই বিতর্কিত এমডির বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ থাকলেও সেই অভিযুক্ত এমডিকে স্বপদে বহাল রেখে বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত ও অভিযুক্ত ব্যক্তির ব্যবস্থাপনায় তদন্ত টিম তদন্ত কার্য সম্পাদন করে পরে তাকে ক্লিন সনদ প্রদান করে জনগনের সাথে তামাশা করেছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারি দায়িত্ব গ্রহনের পর পরই বিগত আওয়ামী সরকার আমলে নিয়োগ পাওয়া সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করেন। সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল ও অনেকেই পদ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও বিগত সরকারের আমলে ৮ দফায় ১৬বছর অবৈধভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে পাওয়া চট্টগ্রাম ওয়াসা এমডি পদ না ছেড়ে নানা চক্রান্তে নিয়োজিত থেকে নির্লজ্জভাবে বেহায়ার মতো চট্টগ্রাম ওয়াসাকে অনিয়ম দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যসহ নিজের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। এই সময়ের মধ্যে ১৪ বারের বেশি পানির দাম বাড়িয়ে চট্টগ্রামবাসীর উপর পানির অতিরিক্ত দামের বোঝা চাপিয়েছেন। এখনো শহরের এক তৃতীয়ংশ মানুষ ওয়াসার পানি পায় না, আর ময়লা, লবনাক্ত পানির যন্ত্রনা ও ভুতড়ে বিলের যন্ত্রনায় জর্জরিত। ওয়াসার বাস্তবায়ন করা ও চলমান প্রতিটি প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছেন। সর্বশেষ নিজের আত্মীয় স্বজনকে পদোন্নতি দেয়া, এমনকি নিজের মেয়ের প্রতিষ্ঠানকে সুয়্যারেজ প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ দেয়াসহ হাজারো অনিয়মে জড়িত। ইতিমধ্যেই তার আত্মীয় ও ওয়াসা কর্মকর্তারা ইতিমধ্যেই দেশত্যাগ করেছেন। অপসারিত এমডি ফজলুল্লাহ যে কোনো সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন। তাই অতি দ্রুত তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা না হলে আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী এমপিদের মতো পালিয়ে যাবে।